বুধবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫| বিকাল ৩:২১

নোয়াখালীতে শ্রমিকদল নেতার খোলস পাল্টে স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৫, ২০২৫ ৯:১৪ অপরাহ্ণ

নোয়াখালীতে শ্রমিকদল নেতার খোলস পাল্টে স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী | ১৫ এপ্রিল ২০২৫

নোয়াখালীর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন মো. আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তি। গত বছরের ৫ আগস্টের আগে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তিনি এখন নিজেকে শ্রমিকদলের নেতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন। এই ঘটনা স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

মো. আব্দুর রহিম নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে। বর্তমানে তিনি পৌর শ্রমিকদলের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের আগে তিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নোয়াখালী জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাভার পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি সাভারে ছাত্র হত্যা মামলার একজন আসামি হিসেবেও পরিচিত।

সম্প্রতি আব্দুর রহিমের নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলোর সঙ্গে তোলা একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই ছবি প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটি অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিলেও আব্দুর রহিমের মতো ব্যক্তিরা দলের ভেতরে প্রবেশ করছেন, যা দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

এওজবালিয়া ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “আব্দুর রহিমের অতীতে অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। এরা দল বদলালেও তাদের স্বভাব বদলায় না। কিছুদিন পর হয়তো কোনো অপকর্ম করে বিএনপির নামে দোষ চাপাবে। এর ফলে সামাজিক মাধ্যমে দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলবে। এ ধরনের ব্যক্তিদের এখনই বাধা না দিলে বিএনপির বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।”

অন্যদিকে, বিএনপি নেতা মো. জিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, “আব্দুর রহিম জুলাই বিপ্লবে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা চলমান। তিনি আওয়ামী লীগের সময়ে সৃষ্ট একজন ব্যক্তি, যিনি এখন শ্রমিকদলের নাম ব্যবহার করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। দুঃখজনকভাবে অনেকে এ বিষয়ে জানা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।”

এই অভিযোগের জবাবে মো. আব্দুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আমার ছবি চাকরির কারণে তুলতে হয়েছিল। আমি সবসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম এবং এখন সাভার বিএনপির সঙ্গে কাজ করছি। আমার বিরুদ্ধে নোংরা রাজনীতি চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সময়ে আমি তাদের মামলায় জেলও খেটেছি।”

নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো বলেন, “আব্দুর রহিম আমাদের বাড়িতে তার বোনের বিয়ের সূত্রে এসেছিলেন এবং সেই সময় ছবি তুলেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় আমার জানা ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমরা দলের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

আব্দুর রহিমের এই রাজনৈতিক দলবদল নোয়াখালীতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ধরনের দল পরিবর্তন দলগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রশ্ন তুলতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা আশা করছেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত