ভারত-চীন সম্পর্কের উষ্ণতা: শিগগিরই শুরু হতে পারে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
দীর্ঘদিনের উত্তেজনা ও দূরত্বের পর ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। দুই প্রতিবেশী দেশ এখন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা আকাশপথে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে এক দফা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বিমান চলাচলের চূড়ান্ত তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স সোমবার (১৪ এপ্রিল) নয়াদিল্লির সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে যে টানাপোড়েন চলছিল, তা এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পথে। এই উন্নতির অংশ হিসেবে ভারত ও চীন সরাসরি যাত্রীবাহী বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু করতে আগ্রহী।
২০২০ সালের জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন সেনা এবং চীনের চারজন সেনা নিহত হন। এই ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে গভীর ফাটল সৃষ্টি করে। এর জেরে ভারত চীনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে ছিল চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর বিনিয়োগ নিষেধাজ্ঞা, শতাধিক জনপ্রিয় চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা এবং দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া। তবে কার্গো ফ্লাইটগুলো অব্যাহত ছিল।
গত বছরের অক্টোবরে সীমান্তে সামরিক অচলাবস্থা নিরসনে ভারত ও চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই মাসে রাশিয়ায় একটি সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৈঠক করেন, যা সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
এছাড়া গত জানুয়ারিতে দুই দেশ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়ে পারস্পরিক সমস্যা সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই উদ্যোগ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি বিমান চলাচল খাতকেও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে চীনের বিমান চলাচল খাতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, করোনাভাইরাস মহামারির পর অনেক দেশ যখন তাদের বিমান চলাচল খাতে পুনরুদ্ধার করেছে, তখন চীন এখনো এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।
নয়াদিল্লিতে ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের এক সম্মেলনে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি ভামলুনমং ভুয়ালনাম জানান, ভারত ও চীনের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মধ্যে ইতিমধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা আলোচনা শুরু করেছি, তবে কিছু বিষয়ে এখনো মতপার্থক্য রয়েছে। এগুলো সমাধানের জন্য কাজ চলছে।” তবে তিনি মতপার্থক্যের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
যাত্রীবাহী বিমান চলাচল শুরু হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া এটি দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ আরও জোরদার করবে। তবে আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার আগে দুই পক্ষের মধ্যে কিছু প্রযুক্তিগত ও নীতিগত বিষয় সমাধান করতে হবে।
ভারত ও চীনের মধ্যে এই সম্পর্কের উষ্ণতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশ যদি তাদের পারস্পরিক স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তবে তা এশিয়ার অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে। এখন সবার দৃষ্টি এই আলোচনার ফলাফলের দিকে।
সূত্র: রয়টার্স