মঙ্গলবার, ৩রা জুন, ২০২৫| রাত ৯:২৬

তিব্বত ইস্যুতে মার্কিন কর্মকর্তাদের ওপর চীনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৫, ২০২৫ ৯:০৬ অপরাহ্ণ
তিব্বত ইস্যুতে মার্কিন কর্মকর্তাদের ওপর চীনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা

তিব্বত ইস্যুতে মার্কিন কর্মকর্তাদের ওপর চীনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১৪ এপ্রিল ২০২৫

চীন তিব্বত ইস্যুতে ‘অনুপযুক্ত আচরণের’ অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা দিয়েছে। এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তিব্বত ইস্যু নিয়ে চলমান উত্তেজনার সর্বশেষ প্রকাশ।

নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এসেছে মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের তিব্বত সংক্রান্ত নীতিমালার সঙ্গে জড়িত চীনা কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পর। ওয়াশিংটন অভিযোগ করেছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি মার্কিন কূটনীতিক, সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তিব্বত ও অন্যান্য তিব্বতি অঞ্চলে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে তাদের প্রতিনিধিদের জন্য অবাধ প্রবেশাধিকারের দাবি জানিয়ে আসছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান সোমবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তিব্বত সংক্রান্ত বিষয়গুলো চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনা কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করে আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করেছে।” তিনি এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অপব্যবহার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে জানান, এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীন মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

তিব্বত, হিমালয় পর্বতমালার কোলে অবস্থিত চীনের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যা দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৫০ সালে চীন এই অঞ্চলটি দখল করে, যার পর থেকে ভারতের সঙ্গে এই অঞ্চল নিয়ে একাধিকবার সংঘাত হয়েছে। গত বছর লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনের মধ্যে একটি প্রাণঘাতী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বহু সেনা হতাহত হন, যা দুই দেশের সম্পর্কে গভীর প্রভাব ফেলে।

চীন তিব্বতে বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়, তবে তাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে দলগতভাবে ভ্রমণ করতে হয়। কূটনীতিক এবং বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য তিব্বতে প্রবেশের প্রক্রিয়া আরও কঠোর। লিন জিয়ান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তিব্বত সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। আমরা তিব্বতে ভ্রমণ, ব্যবসা বা অন্যান্য কারণে আসা বিদেশি বন্ধুদের স্বাগত জানাই। তবে মানবাধিকার, ধর্ম বা সংস্কৃতির নামে তিব্বতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপকারী যেকোনো ব্যক্তি বা দেশের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নেব।”

এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার আরেকটি প্রকাশ। তিব্বত ইস্যু ছাড়াও বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার তিব্বতের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা চীন ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বিবেচনা করে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা পারস্পরিক সম্পর্কের উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতার উদ্যোগ, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা, ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিব্বত ইস্যুতে দুই দেশের এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপ কীভাবে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন বেইজিং ও ওয়াশিংটনের দিকে।

সূত্র: রয়টার্স

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি