বুধবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫| বিকাল ৩:২০

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত, মৃতের সংখ্যা ৫১ হাজারের কাছাকাছি

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৫, ২০২৫ ৮:৫৩ অপরাহ্ণ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত, মৃতের সংখ্যা ৫১ হাজারের কাছাকাছি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত, মৃতের সংখ্যা ৫১ হাজারের কাছাকাছি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১৫ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন হামলায় আরও ৩৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আহত হয়েছেন শতাধিকেরও বেশি মানুষ। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা এই সংঘাতে গাজায় মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫১ হাজারে পৌঁছেছে। তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু সোমবার (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৯ জন নিহত এবং ১১৮ জন আহত হয়েছেন। এই হামলার পর মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০,৯৮৩ জনে, এবং আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১,১৬,২৭৪ জনে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় এখনো অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছেন, কিন্তু উদ্ধারকারী দলগুলো তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করার পর থেকে গাজায় মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যা প্রায় দুই মাস স্থায়ী হয়। এই সময় গাজায় আপেক্ষিক শান্তি বজায় ছিল। কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে হামাসের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল আবারও বিমান হামলা শুরু করে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া এই নতুন হামলায় এখন পর্যন্ত ১,৬১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪,২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এই হামলাগুলো জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ভঙ্গ করেছে, এবং গাজার পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের আগ্রাসী হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া অঞ্চলটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। হাসপাতাল, স্কুল, এবং আবাসিক ভবনগুলো বারবার হামলার শিকার হচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে। তবে এই আইনি পদক্ষেপ সত্ত্বেও গাজায় হামলা অব্যাহত রয়েছে।

এই সংঘাতে নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় আহত অনেকের অবস্থা গুরুতর, এবং চিকিৎসার অভাবে তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে। গাজার হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যে ওষুধ, জ্বালানি এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকটের মধ্যে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানালেও কোনো কার্যকর সমাধান এখনো পাওয়া যায়নি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয়রা বলছেন, যতক্ষণ না ইসরায়েলের হামলা বন্ধ হচ্ছে এবং অবরোধ তুলে নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ গাজার মানুষের দুর্ভোগ কমবে না।

গাজার এই সংকট বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এই সংহতি এখনো গাজার মানুষের জন্য বাস্তব স্বস্তি এনে দিতে পারেনি।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করার দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি এখন এই অঞ্চলের দিকে, যেখানে প্রতিদিন নিরীহ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।

সূত্র: আনাদোলু

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি