গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাব
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাত বন্ধ করতে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি নতুন প্রস্তাব পেশ করেছে। মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় এই প্রস্তাব গাজা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। মিসরের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল আল কাহেরা নিউজ টিভি সোমবার (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
হামাসের মুখপাত্র আবু জুহরি নিশ্চিত করেছেন যে, গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের প্রস্তাবটি পেয়েছে এবং এটি পর্যালোচনা করছে। তিনি বলেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই প্রস্তাবের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব। হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব এই বিষয়ে আলোচনা করবে।” তবে এই প্রস্তাবের প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাবে প্রথমবারের মতো হামাসের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, হামাস যদি তাদের অস্ত্র ত্যাগ করতে সম্মত হয়, তবেই ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি নিয়ে পরবর্তী ধাপে আলোচনা শুরু করবে। এই শর্ত হামাসের জন্য গ্রহণ করা কঠিন হতে পারে। আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, “নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি আমাদের জন্য অনেকগুলো ‘রেড লাইন’ নিয়ে আসে। আমাদের নেতৃত্ব এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবে, এবং তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা আমরা জানাব।”
এর আগে হামাসও একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা বলেছিল, ইসরায়েল যদি গাজা থেকে তাদের সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করে, তাহলে হামাস গাজায় বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইসরায়েল এই প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। ফলে জিম্মিরা এখনো মুক্তি পায়নি, এবং সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।
মিসরের একজন সরকারি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “হামাস এখন বুঝতে পারছে সময় কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, তারা শিগগিরই এই প্রস্তাবের জবাব দেবে।” মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো আশা করছে, এই প্রস্তাব গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
গাজায় চলমান সংঘাতের শুরুটা ২০২৩ সালের অক্টোবরে। ওই সময় হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায়। এই হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৪২ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু।
২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এই সময় গাজায় আপেক্ষিক শান্তি বজায় ছিল। কিন্তু জিম্মি মুক্তি এবং সেনা প্রত্যাহার নিয়ে হামাসের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল আবারও গাজায় বিমান হামলা শুরু করে। এই নতুন হামলায় গত এক মাসে ১,৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার এই সংঘাতে বেসামরিক মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এবং অঞ্চলটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল এবং আবাসিক ভবনগুলো বারবার হামলার শিকার হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছে। গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে।
ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাবটি গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার একটি সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের শর্ত এই আলোচনাকে জটিল করে তুলতে পারে। মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো এবং বিশ্ব সম্প্রদায় এখন হামাসের প্রতিক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। গাজার মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এই প্রস্তাব কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
সূত্র: রয়টার্স