নতুন সম্ভাবনায় উদ্ভাসিত হোক বাংলা নববর্ষ ১৪৩২
কবির ভাষায়, ‘নতুন ঊষা নতুন আলো/নতুন বছর কাটুক ভালো/কাটুক বিষাদ, আসুক হর্ষ/শুভ হোক নববর্ষ’। এই কবিতার মতোই নতুন আশা ও আনন্দ নিয়ে এসেছে আজকের দিনটি — পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ। বিদায় নিয়েছে ১৪৩১ সাল, শুরু হলো নতুন বাংলা বছর ১৪৩২। বাঙালির এই প্রাচীন উৎসব শুধু ক্যালেন্ডারের তারিখ পরিবর্তনের নয়, এটি একটি জাতিগত নবজাগরণের প্রতীক।
বাংলা নববর্ষ যেমন আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, তেমনি এটি আবেগ ও ঐতিহ্যের মিলনস্থল। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আসে ধূলিঝড় আর বজ্রের মাঝে এক নতুন ভোরের বার্তা নিয়ে। এবার নতুন বছর এসেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিজয়ের অনুভূতি নিয়ে — এক পরিবর্তনের সময়, যেখানে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে এক আলোকোজ্জ্বল আগামীর।
বাংলা নববর্ষের মাহাত্ম্য কেবল আনন্দ উদ্যাপনে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এক আত্মবিশ্লেষণের সময়, নতুন করে শুরু করার প্রতিশ্রুতি। বছরের প্রথম দিনটিকে ঘিরে মানুষের মনে ফিরে আসে ফেলে আসা সময়ের সুখ-দুঃখ, পাশাপাশি ভবিষ্যতের আশা-আকাঙ্ক্ষা। সাহিত্যে, সংগীতে, চিত্রকলায় ও নাটকে বাংলা নববর্ষে এসেছে নতুন সৃষ্টির অনুপ্রেরণা হয়ে। বহু গদ্য, কবিতা ও গানে এ উৎসব হয়েছে শিল্পীর মনের প্রতিচ্ছবি।
বাংলা সনের সূচনা হয়েছিল সম্রাট আকবরের সময়, মূলত ফসলি সন হিসেবেই তা চালু হয়েছিল ১৫৫৬ সালে। পরবর্তীতে বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত এই সন বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রয়োজনে যেমন গড়ে উঠেছিল, তেমনি এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসও জড়িয়ে আছে। নববর্ষের অন্যতম ঐতিহ্য হালখাতা—ব্যবসায়ীদের পুরোনো হিসাব বন্ধ করে নতুন খাতা খোলার রীতি—আজও সমানভাবে প্রচলিত।
নববর্ষ মানেই আনন্দ, উৎসব আর লোকজ ঐতিহ্যের নতুন করে ফিরে আসা। পান্তা-ইলিশ খাওয়ার রীতি, নতুন পোশাক পরা, উপহার ও শুভেচ্ছা বিনিময়, হস্ত ও মৃৎশিল্প কেনাকাটা, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান—সব মিলিয়ে এক পরিপূর্ণ সংস্কৃতির উৎসব এটি। সেই সঙ্গে বৈশাখী মেলাও তৈরি করে উৎসবের এক প্রাণবন্ত আবহ। স্থানীয় পণ্যের প্রদর্শনী, খেলনা, লোকজ খাবার, যাত্রা, গান, পুতুলনাচ — সবকিছু মিলে একটি দিন হয়ে ওঠে চিরায়ত বাঙালির ঐতিহ্যের মহোৎসব।
এ বছর বাংলা নববর্ষে এসেছে নতুন একটি পরিবর্তন — ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র পরিবর্তে এবার এর নাম হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। প্রতিপাদ্য ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এই প্রতিপাদ্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের বার্তা বহন করে।
নতুন বছরটি হোক প্রতিজ্ঞার, হোক পরিবর্তনের। নববর্ষে আমরা প্রত্যাশা করি এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে থাকবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, গণতন্ত্র এবং মানবিকতা। হোক প্রতিটি দিন নতুন আশার, নতুন আনন্দের, এবং জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ভরে উঠুক সফলতা, সুখ ও শান্তিতে।
সবার জন্য রইলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ!