শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২০

ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানোয় ভারতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী বরখাস্ত

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৮, ২০২৫ ৬:৫৮ অপরাহ্ণ
ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানোয় ভারতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী বরখাস্ত

ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানোয় ভারতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী বরখাস্ত

ভারতের উত্তরপ্রদেশে এক চুক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎ কর্মীকে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানোর কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ৩১ মার্চ, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে এই ঘটনা ঘটে। বরখাস্ত হওয়া ওই কর্মীর নাম সাকিব খান। তিনি সাহারানপুরের কৈলাসপুর পাওয়ার হাউসে কাজ করতেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস রোববার (৬ এপ্রিল) এই খবর প্রকাশ করেছে।

সাকিব খান ঈদের নামাজের পর ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়েছিলেন। এমনকি সেই মুহূর্তের একটি ছবি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেন। কিন্তু এই কাজকে “দেশবিরোধী” হিসেবে চিহ্নিত করে বিদ্যুৎ বিভাগ তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়। বিদ্যুৎ বিভাগের এক্সিকিউটিভ অফিসার সঞ্জীব কুমার পিটিআই-কে বলেন, “এই ঘটনা আমাদের নজরে আসার পর এটাকে দেশবিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

সঞ্জীব কুমার জানান, “সাকিব একটি ঠিকাদারি সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন। আমরা সেই সংস্থাকে চিঠি দিয়ে তাকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছি।” সাকিবের এই কাজের পর বিদ্যুৎ বিভাগের এই কঠোর পদক্ষেপ স্থানীয়দের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একজন বলেন, “এটা কি সত্যিই দেশবিরোধী? নাকি এটা বাড়াবাড়ি?”

এদিকে, ঈদের দিনে শুধু সাকিবই নন, সাহারানপুরে আরও অনেকে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মিছিল করেছিলেন। সেই মিছিলের ছবি আর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। পুলিশ জানায়, আম্বালা ঈদগাহে নামাজের পর কয়েকজন ফিলিস্তিনপন্থি স্লোগান দিয়ে পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামেন। এই ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ৮ জনকে আটক করেছে।

সাহারানপুরের পুলিশ সুপার ব্যোম বিন্দল বলেন, “আমরা সেই দিনের ভিডিও ফুটেজ দেখে বাকিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” পুলিশের একটি সূত্র জানায়, “এই মিছিলে অনেকে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি দেখাতে পতাকা নিয়ে হেঁটেছেন। কিন্তু এটা শান্তি বজায় রাখার জন্য উদ্বেগজনক বলে বিবেচিত হয়েছে।”

এই ঘটনা গাজার চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে সংহতি প্রকাশের ঘটনা বাড়ছে। ভারতেও অনেকে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলছেন। সাকিবের এক বন্ধু বলেন, “সে শুধু তার মত প্রকাশ করেছিল। এত বড় শাস্তি কেন?”

বিদ্যুৎ বিভাগের এই সিদ্ধান্তে সমালোচনা উঠেছে। একজন স্থানীয় বলেন, “এটা ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি। চাকরি খোয়ানোর মতো অপরাধ কী করেছে সে?” অন্যদিকে, কর্তৃপক্ষের যুক্তি, “এটা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। আমরা এটা হালকাভাবে নিতে পারি না।”

সাকিবের পরিবার এই সিদ্ধান্তে হতাশ। তার ভাই বলেন, “এটা আমাদের জন্য বড় ধাক্কা। সে শুধু ঈদে তার ভালোবাসা দেখিয়েছিল।” সোশ্যাল মিডিয়ায় সাকিবের পোস্ট করা ছবিটি এখনো ভাইরাল। অনেকে তার পক্ষে কথা বললেও, অনেকে বলছেন, “এটা করা উচিত হয়নি।”

পুলিশের তদন্ত এখনো চলছে। ব্যোম বিন্দল বলেন, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি