শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| ভোর ৫:১৫

বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৬, ২০২৫ ৩:৫৮ অপরাহ্ণ
বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০

বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০

রংপুরের বদরগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে একজন নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম লাভলু মিয়া। তিনি রাজরামপুর গ্রামের মৃত মহসিন আলীর ছেলে এবং পেশায় একজন ইটভাটা ব্যবসায়ী ছিলেন। শনিবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে, যা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে বদরগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায়, দুপুর ১২টার দিকে। একটি দোকানঘরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধ হঠাৎ সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষে লাভলু মিয়া গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। এই ঘটনায় আহতদের মধ্যে সাংবাদিকসহ অনেকে রয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরও রমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংঘর্ষের সময় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। স্থানীয়রা জানান, লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, অনেকে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “হঠাৎ গোলমাল শুরু হলো। আমরা বুঝে উঠার আগেই গুলি-চিৎকারে চারদিক অশান্ত হয়ে গেল।”

এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় বদরগঞ্জ পৌরশহরে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির জেলা সদস্য ও সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী সরকার। তিনি অভিযোগ করেন, “কালুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক ও তার ছেলে তানভীর আহমেদ তমাল সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার দলের কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। তারা লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। এই হামলায় আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী লাভলু মিয়াকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়।” তিনি প্রশাসনের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, “পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকায় আমরা হতাশ। আমরা দাবি করছি, চেয়ারম্যান মানিক, তার ছেলে ও জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।”

এ বিষয়ে রংপুরের জেলা পুলিশ সুপার আবু সাইম আমার দেশকে জানান, “আমরা শুনেছি, গতকাল থেকে দুই পক্ষ বোঝাপড়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কেউ কারো কথা না শুনে আজ এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে।” তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, “যারাই এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।” পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দোকানঘরটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ আলী সরকার, আরেক পক্ষে শহিদুল হক মানিক। দুই গ্রুপই বিএনপির সমর্থক হলেও, স্থানীয় আধিপত্য ও ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে। একজন বাসিন্দা বলেন, “এটা দলের ভেতরের কোন্দল। কিন্তু এভাবে প্রাণ যাবে, কেউ ভাবেনি।”

লাভলু মিয়ার মৃত্যুতে তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে। তার স্ত্রী বলেন, “তিনি রাজনীতি করতেন, কিন্তু এভাবে মারা যাবেন, এটা আমরা কল্পনাও করিনি। আমরা বিচার চাই।” সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে কয়েকজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একজন আহত বলেন, “আমরা শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম, হঠাৎ হামলা শুরু হয়।”

এ ঘটনায় বদরগঞ্জে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এই সংঘর্ষের জের আরও বড় আকার নিতে পারে। পুলিশ সুপার জানান, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মোহাম্মদ আলী সরকার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটা আমাদের দলের জন্য দুঃখজনক। আমরা শান্তি চাই। কিন্তু অপরাধীদের শাস্তি না হলে এমন ঘটনা থামবে না।”

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি