ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের পদত্যাগ
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারে জোটের মধ্যে বিরোধের জেরে এই উগ্র-কট্টর ডানপন্থি নেতা পদ ছেড়েছেন। তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-এর বরাতে আনাদোলু জানায়, সোমবার, ৩১ মার্চ, বেজালেল স্মোট্রিচ অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এই ঘটনা নেতানিয়াহুর ডানপন্থি জোটের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। স্মোট্রিচ একজন শক্তিশালী অতি-ডানপন্থি নেতা। তার এই পদত্যাগ জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে পদ ছাড়লেও তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছেন না। তিনি ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে ফিরে যাবেন। সেখানে তিনি তার দল, রিলিজিয়াস জায়োনিজম পার্টির আইন প্রণেতা হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন।
এই পদত্যাগের পেছনে রয়েছে জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। আনাদোলুর প্রতিবেদন বলছে, নেসেট সদস্য জভি সুক্কোতকে পুনর্বহাল করা নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সঙ্গে স্মোট্রিচের তীব্র মতবিরোধ হয়। এই বিরোধই তাকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। বেন-গভির নিজেও একজন উগ্র-ডানপন্থি নেতা এবং ওটজমা ইয়েহুদিত দলের প্রধান। এই দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েন চলছিল।
স্মোট্রিচের দল রিলিজিয়াস জায়োনিজম এক বিবৃতিতে বেন-গভিরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। তারা বলছে, বেন-গভির স্মোট্রিচ, নেতানিয়াহু, এবং তার ক্ষমতাসীন লিকুদ দলের মধ্যে করা রাজনৈতিক চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। এই চুক্তি ছিল জোটের ভিত্তি। কিন্তু বেন-গভিরের পদক্ষেপে সেই ভিত্তি নড়ে গেছে। একজন দলীয় সদস্য বলেন, “আমরা একসঙ্গে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু বেন-গভির নিজের স্বার্থে সব ধ্বংস করে দিলেন।”
এই পদত্যাগ ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থি জোটের মধ্যে গভীর ফাটলের চিত্র তুলে ধরেছে। গত কয়েক মাসে এই জোট গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ আর নীতি নিয়ে বারবার বিভক্ত হয়েছে। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “নেতানিয়াহুর জোট এখন ভঙ্গুর অবস্থায়। স্মোট্রিচের পদত্যাগ এই সংকটকে আরও গভীর করল।” স্মোট্রিচ অর্থমন্ত্রী হিসেবে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। তার চলে যাওয়ায় সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্মোট্রিচ নিজে পদত্যাগের পর এখনো বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি নেসেটে ফিরে আরও শক্তিশালী ভূমিকা নিতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন, সেখান থেকে তিনি তার দলের স্বার্থ আরও ভালোভাবে রক্ষা করতে পারবেন। একজন দলীয় নেতা বলেন, “স্মোট্রিচ হাল ছাড়েননি। তিনি নতুনভাবে লড়াই শুরু করবেন।”
এই ঘটনা নেতানিয়াহুর জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তার জোটের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিরোধী দলগুলো এই সুযোগে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে পারে। একজন নাগরিক বলেন, “আমাদের দেশে এখন শান্তির চেয়ে রাজনৈতিক ঝগড়াই বেশি।”