শনিবার, ৭ই জুন, ২০২৫| সকাল ৯:৪৩

ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আল-আকসায় জুমাতুল বিদা

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৯, ২০২৫ ১:৩৪ অপরাহ্ণ
ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আল-আকসায় জুমাতুল বিদা

ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আল-আকসায় জুমাতুল বিদা

পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার, যিনি জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত, তা পালিত হয়েছে ফিলিস্তিনের আল-আকসা মসজিদে। গত ২৮ মার্চ ২০২৫-এ ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রায় ৭৫,০০০ মুসল্লি এই পবিত্র স্থানে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। এই দিনটি মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি রমজানের শেষ জুমা এবং ঈদ-উল-ফিতরের আগের একটি আবেগঘন বিদায়ের মুহূর্ত। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনীর বিধিনিষেধের কারণে এই পবিত্রতা পালন করা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ আল-আকসা মসজিদে প্রবেশের ওপর বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে। এই রমজানেও তারা কঠোর নিয়ম জারি করেছিল। পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে আগত ফিলিস্তিনিদের জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়—পুরুষদের জন্য ৫৫ বছরের বেশি এবং নারীদের জন্য ৫০ বছরের বেশি হতে হবে। এছাড়া, প্রবেশের জন্য বিশেষ পারমিটের প্রয়োজন ছিল, যা অনেকেই পাননি। কালান্দিয়া চেকপয়েন্টে শত শত ফিলিস্তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। একজন বৃদ্ধ বলেন, “আমি ৬২ বছর বয়সী, তবু আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এটা আমাদের ধর্মীয় অধিকারের ওপর আঘাত।”

তবে এই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের ঈমানের শক্তি অটুট। আল-আকসার চত্বরে মুসল্লিরা “আল্লাহু আকবর” ধ্বনিতে মুখরিত করে তুলেছিলেন। জেরুজালেমের ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ জানায়, এই জুমাতুল বিদায়ে ৭৫,০০০ মানুষ নামাজে অংশ নিয়েছেন। অনেকে পায়ে হেঁটে, অনেকে চেকপয়েন্টে ঝুঁকি নিয়ে এসেছেন। একজন তরুণী বলেন, “আমরা ভয় পাই না। আল-আকসা আমাদের হৃদয়। এখানে নামাজ পড়া আমাদের প্রতিরোধের অংশ।”

ইসরাইলি পুলিশ এই সময়ে মসজিদের প্রবেশপথে ভারী নিরাপত্তা জোরদার করেছিল। তারা টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে ভিড় ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “পুলিশ আমাদের দিকে গুলি ছুঁড়ছিল। আমরা শুধু নামাজ পড়তে এসেছিলাম।” এই দমননীতি সত্ত্বেও মানুষের জয় ছিল তাদের অধ্যবসায়ে।

আল-আকসা মসজিদ মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। এটি দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৬৭ সাল থেকে পূর্ব জেরুজালেম দখলের পর ইসরাইল এই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ জারি রেখেছে। ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করে, ইসরাইল ধীরে ধীরে এই মসজিদের ইসলামি চরিত্র মুছে ফেলতে চায়। এই জুমাতুল বিদায়ে হামাসসহ বিরোধী গোষ্ঠীগুলো মুসলিমদের আল-আকসা রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিল।

আন্তর্জাতিক মহল থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। জর্ডান, যারা আল-আকসার তত্ত্বাবধায়ক, এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করেছে। তুরস্কও বলেছে, “এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন।” কিন্তু ইসরাইল দাবি করে, এটি শুধু নিরাপত্তার জন্য। একজন ফিলিস্তিনি মা বলেন, “আমরা শান্তি চাই। কিন্তু আমাদের নামাজে বাধা দেওয়া হলে আমরা চুপ থাকব না।”

এই জুমাতুল বিদা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের প্রতীক। তারা প্রমাণ করেছে, কোনো নিষেধাজ্ঞাই তাদের বিশ্বাসের পথ থেকে সরাতে পারে না। এই ঘটনা বিশ্বের কাছে তাদের অধিকারের জন্য লড়াইয়ের একটি জীবন্ত চিত্র তুলে ধরেছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত

সিরিয়ায় ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলের ৪৮০টি হামলা, বাদ যায়নি নৌবহর

ছয় দিনব্যাপী পাটপণ্য মেলা উদ্বোধন

নতুন ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে হাজির আমির খান

নতুন ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে হাজির আমির খান

রাজস্থানে পাকিস্তানি রেঞ্জার আটক, নিয়ন্ত্রণরেখায় ভয়াবহ সংঘর্ষে উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত

রাজস্থানে পাকিস্তানি রেঞ্জার আটক, নিয়ন্ত্রণরেখায় ভয়াবহ সংঘর্ষে উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত

অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট: বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ গত বছরের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পূর্ণ করতে চললেও দেশের অর্থনীতি এখনও স্থবিরতার মধ্যেই রয়েছে। মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে স্থবিরতা, কর্মসংস্থান সংকট, রফতানি হ্রাস ও রাজস্ব ঘাটতির মতো বহু সমস্যা সামনে রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তুতের আগে অর্থ মন্ত্রণালয় যে আটটি প্রধান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং এলডিসি উত্তরণে প্রস্তুতি। অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একইসঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনাও থাকছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতে কেবল সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ না থাকায় দেশের শিল্প খাতেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিতে এলসি খোলার হার ৩০ শতাংশ কমেছে। শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ নেমে এসেছে ৪৮.৪১ শতাংশে এবং দেশে বর্তমানে বেকার সংখ্যা ২৭ লাখ ৩০ হাজার, যা এক বছরে বেড়েছে সোয়া তিন লাখ। বিদেশে কর্মী পাঠানোর হারও ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে আশার কথা হলো—রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে এবং মার্চ ও এপ্রিল মাসে তা রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছেছে। এদিকে বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্য ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এনবিআর মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে, ফলে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সরকার নতুন খাতে কর আরোপ এবং কর ব্যবস্থার অটোমেশন চালুর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সরকারি ঋণের পরিমাণ এরইমধ্যে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেট বাস্তবায়নে আরও ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে সুদ পরিশোধেই ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। তবে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে বাজেট ঘাটতি সীমিত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চাভিলাষী এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, বাজেটের আকার আরও ছোট ও বাস্তবসম্মত হলে তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হতো। সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, বাজেটের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যেও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, ভারতের পণ্যে নিষেধাজ্ঞা এবং বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতায় রফতানি কমেছে। আখাউড়া স্থলবন্দরের মতো সীমান্ত বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথগুলোর কার্যকারিতা কমে গেছে। এছাড়া, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং চাঁদাবাজি ও সাইবার হুমকির কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এমন অবস্থায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বিনিয়োগ সুরক্ষায় ‘ফাস্ট-ট্র্যাক অভিযোগ নিষ্পত্তি’ এবং ‘ই-কমার্স নিরাপত্তা ইউনিট’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। এই সব বাস্তবতায় সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন, যার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে গতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট: বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ

কানাডার ম্যানিটোবায় ভয়াবহ দাবানল, হাজারো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

কানাডার ম্যানিটোবায় ভয়াবহ দাবানল, হাজারো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংসের প্রশ্রয় নয়: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংসের প্রশ্রয় নয়: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

শনিবার মুক্তি পাচ্ছে ৩ ইসরাইলি জিম্মি, নাম জানালো হামাস

শনিবার মুক্তি পাচ্ছে ৩ ইসরাইলি জিম্মি, নাম জানালো হামাস

আইনজীবী হত্যার বিচার চেয়ে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ অব্যাহত

আজকের নামাজের সময়সূচী

আজকের নামাজের সময়সূচী (৪ ডিসেম্বর, ২০২৪)