ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আল-আকসায় জুমাতুল বিদা
পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার, যিনি জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত, তা পালিত হয়েছে ফিলিস্তিনের আল-আকসা মসজিদে। গত ২৮ মার্চ ২০২৫-এ ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রায় ৭৫,০০০ মুসল্লি এই পবিত্র স্থানে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। এই দিনটি মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি রমজানের শেষ জুমা এবং ঈদ-উল-ফিতরের আগের একটি আবেগঘন বিদায়ের মুহূর্ত। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনীর বিধিনিষেধের কারণে এই পবিত্রতা পালন করা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ আল-আকসা মসজিদে প্রবেশের ওপর বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে। এই রমজানেও তারা কঠোর নিয়ম জারি করেছিল। পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে আগত ফিলিস্তিনিদের জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়—পুরুষদের জন্য ৫৫ বছরের বেশি এবং নারীদের জন্য ৫০ বছরের বেশি হতে হবে। এছাড়া, প্রবেশের জন্য বিশেষ পারমিটের প্রয়োজন ছিল, যা অনেকেই পাননি। কালান্দিয়া চেকপয়েন্টে শত শত ফিলিস্তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। একজন বৃদ্ধ বলেন, “আমি ৬২ বছর বয়সী, তবু আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এটা আমাদের ধর্মীয় অধিকারের ওপর আঘাত।”
তবে এই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের ঈমানের শক্তি অটুট। আল-আকসার চত্বরে মুসল্লিরা “আল্লাহু আকবর” ধ্বনিতে মুখরিত করে তুলেছিলেন। জেরুজালেমের ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ জানায়, এই জুমাতুল বিদায়ে ৭৫,০০০ মানুষ নামাজে অংশ নিয়েছেন। অনেকে পায়ে হেঁটে, অনেকে চেকপয়েন্টে ঝুঁকি নিয়ে এসেছেন। একজন তরুণী বলেন, “আমরা ভয় পাই না। আল-আকসা আমাদের হৃদয়। এখানে নামাজ পড়া আমাদের প্রতিরোধের অংশ।”
ইসরাইলি পুলিশ এই সময়ে মসজিদের প্রবেশপথে ভারী নিরাপত্তা জোরদার করেছিল। তারা টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে ভিড় ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “পুলিশ আমাদের দিকে গুলি ছুঁড়ছিল। আমরা শুধু নামাজ পড়তে এসেছিলাম।” এই দমননীতি সত্ত্বেও মানুষের জয় ছিল তাদের অধ্যবসায়ে।
আল-আকসা মসজিদ মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। এটি দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৬৭ সাল থেকে পূর্ব জেরুজালেম দখলের পর ইসরাইল এই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ জারি রেখেছে। ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করে, ইসরাইল ধীরে ধীরে এই মসজিদের ইসলামি চরিত্র মুছে ফেলতে চায়। এই জুমাতুল বিদায়ে হামাসসহ বিরোধী গোষ্ঠীগুলো মুসলিমদের আল-আকসা রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক মহল থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। জর্ডান, যারা আল-আকসার তত্ত্বাবধায়ক, এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করেছে। তুরস্কও বলেছে, “এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন।” কিন্তু ইসরাইল দাবি করে, এটি শুধু নিরাপত্তার জন্য। একজন ফিলিস্তিনি মা বলেন, “আমরা শান্তি চাই। কিন্তু আমাদের নামাজে বাধা দেওয়া হলে আমরা চুপ থাকব না।”
এই জুমাতুল বিদা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের প্রতীক। তারা প্রমাণ করেছে, কোনো নিষেধাজ্ঞাই তাদের বিশ্বাসের পথ থেকে সরাতে পারে না। এই ঘটনা বিশ্বের কাছে তাদের অধিকারের জন্য লড়াইয়ের একটি জীবন্ত চিত্র তুলে ধরেছে।