শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| ভোর ৫:৫৯

সপ্তমবারের মতো বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুকাশেঙ্কো

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৬, ২০২৫ ৫:৪১ অপরাহ্ণ
সপ্তমবারের মতো বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুকাশেঙ্কো

সপ্তমবারের মতো বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুকাশেঙ্কো

বেলারুশের দীর্ঘদিনের শাসক আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো সপ্তমবারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। গত ২৫ মার্চ, ২০২৫ তারিখে মিনস্কে অবস্থিত স্বাধীনতা প্রাসাদে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি শপথ নেন। এই শপথ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু হওয়া তাঁর শাসনকালকে আরও পাঁচ বছরের জন্য বর্ধিত করলেন, যা ২০৩০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ৮৬.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন বলে দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। তবে, এই নির্বাচন পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

লুকাশেঙ্কোর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বেলারুশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সামরিক নেতৃবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি দেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাব। পশ্চিমাদের হুমকি ও চাপ আমাদের পথ থেকে সরাতে পারবে না।” তাঁর এই বক্তব্যে রাশিয়ার প্রতি তাঁর দৃঢ় সমর্থন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার প্রতি উপেক্ষার মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে। লুকাশেঙ্কোকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এবং এই জয়ের পর পুতিন তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বেলারুশে লুকাশেঙ্কোর শাসন ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্বাধীনতা লাভ করে বেলারুশ। এরপর ১৯৯৪ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি ক্ষমতায় আসেন। তখন থেকে প্রতিটি নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছেন, যদিও পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনগুলোকে ‘প্রহসন’ ও ‘ভোট কারচুপি’ হিসেবে অভিহিত করে আসছে। এবারের নির্বাচনেও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা ছিলেন তাঁরই অনুগত ব্যক্তি, যারা ৫ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। বিরোধী নেত্রী সভেৎলানা তিখানোভস্কায়া, যিনি ২০২০ সালে লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, এবারও নির্বাচনকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন।

নির্বাচনের পর বেলারুশে বিক্ষোভের আশঙ্কা থাকলেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে বড় ধরনের কোনো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। ২০২০ সালে নির্বাচনের পর দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল, যাতে হাজার হাজার মানুষ গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। এবার কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন জোরদার করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে শতাধিক বিরোধী নেতা ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

লুকাশেঙ্কোর শপথ গ্রহণের পর পশ্চিমা দেশগুলো তাঁর শাসনকে আবারও অবৈধ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। তবে, লুকাশেঙ্কো এই সমালোচনাকে উপেক্ষা করে বলেছেন, “আমরা আমাদের পথে চলব। পশ্চিমাদের পাত্তা দিই না।” রাশিয়ার সমর্থন তাঁর শাসনের অন্যতম শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, লুকাশেঙ্কোর এই জয় বেলারুশে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে আরও দমিয়ে দেবে। দেশটির অর্থনীতি রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল, এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। তবু, লুকাশেঙ্কো স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলার নামে তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখতে সংকল্পবদ্ধ। তাঁর শপথ গ্রহণ বেলারুশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত