শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:০১

তুরস্কে উত্তাল বিক্ষোভের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকদের আটক

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৫, ২০২৫ ১০:৪২ অপরাহ্ণ
তুরস্কে উত্তাল বিক্ষোভের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকদের আটক

তুরস্কে উত্তাল বিক্ষোভের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকদের আটক

তুরস্কে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তাল বিক্ষোভের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে চলমান অস্থিরতা ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকদের আটক করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ২৪ মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সরকার বিক্ষোভ দমন ও তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই পদক্ষেপে শতাধিক সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও সাংবাদিক সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে দেশটির অর্থনৈতিক সংকট এবং সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান জনরোষ থেকে। গত কয়েক সপ্তাহে তুর্কি লিরার মূল্যে অভূতপূর্ণ পতন, মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্বের হার বৃদ্ধি জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়েছে। এর প্রতিবাদে ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা ও ইজমিরের মতো বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য রাস্তায় নেমেছে। তবে, পুলিশ এই বিক্ষোভ দমনে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং জলকামান ব্যবহার করেছে। সরকারি হিসেবে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তুর্কি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহ থেকে কর্তৃপক্ষ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে বিক্ষোভের সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিকদের আটক করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, কমপক্ষে ১৫০ সাংবাদিককে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। তুরস্কের স্বাধীন সাংবাদিক সংগঠনের দাবি, এটি সরকারের “তথ্য নিয়ন্ত্রণ ও গণতন্ত্র হরণের” একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ। আটককৃতদের মধ্যে কয়েকজন বিশিষ্ট সাংবাদিকের নামও উঠে এসেছে, যারা বিক্ষোভের লাইভ প্রতিবেদন প্রকাশ করছিলেন।

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই আটক অভিযান “জাতীয় নিরাপত্তা” ও “ভুয়া সংবাদ প্রতিরোধে” প্রয়োজনীয়। তবে, সমালোচকরা বলছেন, এরদোয়ান সরকার দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে আসছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কে প্রেস স্বাধীনতার সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬৫তম স্থানে রয়েছে। এই ঘটনার পর সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “সাংবাদিকদের বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া সরকারের ভীতি ও নিপীড়নের প্রমাণ।”

এদিকে, বিক্ষোভ দমনে ইন্টারনেটের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সরকার সমালোচনা থামাতে ইন্টারনেট স্লো-ডাউন এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে। এই পদক্ষেপে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের গণমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবে, তুরস্ক সরকার এই সমালোচনাকে “অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ” হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বিক্ষোভ ও সাংবাদিকদের আটক তুরস্কের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে আরও দুর্বল করছে। এরদোয়ানের দীর্ঘ শাসনের মধ্যে এটি একটি নতুন সংকটের সূচনা হতে পারে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত