কমিটি গঠনের দ্বন্দ্বে শ্রমিকদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
মাদারীপুরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আবারও রক্তাক্ত রূপ নিয়েছে। শ্রমিকদলের একটি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে শ্রমিকদল নেতা শাকিল মুন্সিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে শনিবার (২২ মার্চ, ২০২৫) রাতে মাদারীপুরের বিসিক শিল্প এলাকায়। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশের বরাতে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অঙ্গসংগঠন শ্রমিকদলের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ এবং কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বই এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি টহল জোরদার করেছে।
শাকিল মুন্সি মাদারীপুর জেলা শ্রমিকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি বিএনপির সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং স্থানীয়ভাবে তার বেশ প্রভাব ছিল। স্থানীয়রা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় শ্রমিকদলের একটি কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়। এরপর রাতে বিসিক এলাকায় শাকিলের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ জড়ো হলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাকিলকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। তাকে দ্রুত মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলেও রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন, এবং হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। মাদারীপুর থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “আমরা মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শ্রমিকদলের কমিটি গঠন নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।” তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যে দাবি করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এই হামলার জন্য দায়ী। একটি পোস্টে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শাকিল মুন্সিকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে।” তবে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটি শ্রমিকদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল। জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, “আমাদের দলের কেউ এতে জড়িত নয়। এটি তাদের নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই।”
বিএনপি নেতারা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এটি আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত হামলা। তারা আমাদের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে হত্যা করছে। আমরা এর বিচার চাই।” তিনি সরকারের কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
এই ঘটনার পর শাকিলের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, “আমার স্বামী শুধু দলের জন্য কাজ করতেন। তারা তাকে মেরে আমাদের সব শেষ করে দিল।” স্থানীয়রা জানান, শাকিল দুই সন্তানের জনক ছিলেন এবং পেশায় একজন ছোট ব্যবসায়ী ছিলেন।