শুক্রবার, ৬ই জুন, ২০২৫| রাত ১০:২৮

টর্নেডোর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড যুক্তরাষ্ট্র, নিহত ৩৪, লাখো মানুষ বিদ্যুৎহীন

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ১৬, ২০২৫ ৪:৩৩ অপরাহ্ণ
টর্নেডোর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড যুক্তরাষ্ট্র, নিহত ৩৪, লাখো মানুষ বিদ্যুৎহীন

টর্নেডোর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড যুক্তরাষ্ট্র, নিহত ৩৪, লাখো মানুষ বিদ্যুৎহীন

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ টর্নেডো এবং ধূলিঝড় তাণ্ডব চালিয়ে গেছে। একের পর এক শক্তিশালী ঝড় আঘাতে দেশটির অন্তত ছয়টি অঙ্গরাজ্যে লণ্ডভণ্ড অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৩৪ জনে পৌঁছেছে, আহত হয়েছে বহু মানুষ, এবং প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি উদ্ধারকাজ চলছে, তবে দুর্যোগের আশঙ্কা এখনো কাটেনি।

শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত টর্নেডো ও ঝড় সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে মিসৌরি, আরকানসাস, টেক্সাস, ওকলাহোমা, জর্জিয়া এবং ইলিনয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিধ্বংসী টর্নেডোর কারণে মিসৌরিতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে, যেখানে ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। টেক্সাসের অ্যামারিলো এলাকায় ধূলিঝড়ের মধ্যে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনজন। এছাড়া আরকানসাসে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে ২৯ জনের বেশি। ওকলাহোমা এবং জর্জিয়াতেও প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা (এনডব্লিউএস) এই পরিস্থিতিকে ‘বিশেষভাবে বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, নতুন করে আরও শক্তিশালী টর্নেডো আঘাত হানতে পারে লুইসিয়ানা, মিসিসিপি, আলাবামা ও জর্জিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। ইতোমধ্যে মধ্য মিসিসিপি, পূর্ব লুইসিয়ানা এবং পশ্চিম টেনেসিতে টর্নেডো সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যেখানে আকস্মিক বন্যা ও প্রবল ঝড়ের আশঙ্কাও রয়েছে।

টর্নেডোর দাপটে হাজারো গাড়ি উল্টে গেছে, বহু ঘরবাড়ি ও স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে। পাওয়ারআউটেজ সাইটের তথ্যমতে, শনিবার বিকেলের মধ্যেও টেক্সাস, মিসৌরি, ইলিনয়সহ ছয়টি রাজ্যের দুই লাখ ৪০ হাজারের বেশি বাড়িঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

মিসৌরির গভর্নর মাইক কেহো জানিয়েছেন, রাজ্যজুড়ে ভয়াবহ টর্নেডোর আঘাতে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, গাছপালা উপড়ে পড়েছে এবং অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। জরুরি উদ্ধারকর্মীরা রাতদিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও সময় লাগবে। অন্যদিকে, আরকানসাসের গভর্নর সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্স তার রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।

টেক্সাসেও পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ধূলিঝড় ও টর্নেডোর কারণে বহু স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেখানকার কিছু শহর কার্যত বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে অচল হয়ে গেছে। প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বেশ কয়েকদিন লেগে যেতে পারে।

এনডব্লিউএস সতর্ক করে জানিয়েছে, দুর্যোগ এখানেই শেষ নয়। রোববারের মধ্যেই টর্নেডোর প্রভাব আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে আলাবামা, ফ্লোরিডা এবং জর্জিয়ায়। একই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে প্রবল তুষারঝড়ের আশঙ্কাও করা হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের ভয়াবহ টর্নেডো প্রায়শই আঘাত হানে, তবে এবারের দুর্যোগের ব্যাপ্তি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও তীব্র ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠছে। বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের সহায়তা চাইলেও, পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত
কমিউনিটির সৃজনশীল অবদানে সম্মাননা পেলেন বার্কিং ও ড্যাগেনহ্যামের মানুষরা

কমিউনিটির সৃজনশীল অবদানে সম্মাননা পেলেন বার্কিং ও ড্যাগেনহ্যামের মানুষরা

সিলেট টেস্টের প্রথম দিনেই জিম্বাবুয়ের সাফল্য, প্রশংসায় মুখর ল্যাঙ্গাভেল্ট

সিলেট টেস্টের প্রথম দিনেই জিম্বাবুয়ের সাফল্য, প্রশংসায় মুখর ল্যাঙ্গাভেল্ট

আ.লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়ে গেছে, এটার আর পুনর্জাগরণ হবে না - নুর

আ.লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়ে গেছে, এটার আর পুনর্জাগরণ হবে না – নুর

আজকের আবহাওয়া (৬ জুন, ২০২৫)

আজকের আবহাওয়া (২১ এপ্রিল, ২০২৫)

জাতিসংঘ কর্মী ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে জেনেভায় বিক্ষোভ

জাতিসংঘ কর্মী ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে জেনেভায় বিক্ষোভ

ন্যাশনাল ব্যাংকে আইটি সিকিউরিটি প্রফেশনাল পদে নিয়োগ

ন্যাশনাল ব্যাংকে আইটি সিকিউরিটি প্রফেশনাল পদে নিয়োগ

ইতিহাসের এই দিনে (৭ জানুয়ারি ২০২৫)

ইতিহাসের এই দিনে (২০ ডিসেম্বর, ২০২৪)

ট্রেনে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু

ট্রেনে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু

যুক্তরাষ্ট্রে নারীনেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে জায়মা রহমান, আলোচনায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

যুক্তরাষ্ট্রে নারীনেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে জায়মা রহমান, আলোচনায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট: বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ গত বছরের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পূর্ণ করতে চললেও দেশের অর্থনীতি এখনও স্থবিরতার মধ্যেই রয়েছে। মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে স্থবিরতা, কর্মসংস্থান সংকট, রফতানি হ্রাস ও রাজস্ব ঘাটতির মতো বহু সমস্যা সামনে রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তুতের আগে অর্থ মন্ত্রণালয় যে আটটি প্রধান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং এলডিসি উত্তরণে প্রস্তুতি। অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একইসঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনাও থাকছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতে কেবল সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ না থাকায় দেশের শিল্প খাতেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিতে এলসি খোলার হার ৩০ শতাংশ কমেছে। শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ নেমে এসেছে ৪৮.৪১ শতাংশে এবং দেশে বর্তমানে বেকার সংখ্যা ২৭ লাখ ৩০ হাজার, যা এক বছরে বেড়েছে সোয়া তিন লাখ। বিদেশে কর্মী পাঠানোর হারও ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে আশার কথা হলো—রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে এবং মার্চ ও এপ্রিল মাসে তা রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছেছে। এদিকে বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্য ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এনবিআর মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে, ফলে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সরকার নতুন খাতে কর আরোপ এবং কর ব্যবস্থার অটোমেশন চালুর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সরকারি ঋণের পরিমাণ এরইমধ্যে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেট বাস্তবায়নে আরও ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে সুদ পরিশোধেই ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। তবে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে বাজেট ঘাটতি সীমিত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চাভিলাষী এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, বাজেটের আকার আরও ছোট ও বাস্তবসম্মত হলে তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হতো। সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, বাজেটের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যেও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, ভারতের পণ্যে নিষেধাজ্ঞা এবং বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতায় রফতানি কমেছে। আখাউড়া স্থলবন্দরের মতো সীমান্ত বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথগুলোর কার্যকারিতা কমে গেছে। এছাড়া, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং চাঁদাবাজি ও সাইবার হুমকির কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এমন অবস্থায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বিনিয়োগ সুরক্ষায় ‘ফাস্ট-ট্র্যাক অভিযোগ নিষ্পত্তি’ এবং ‘ই-কমার্স নিরাপত্তা ইউনিট’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। এই সব বাস্তবতায় সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন, যার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে গতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট: বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ