শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:১৮

অপতথ্য মোকাবিলা ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ১৬, ২০২৫ ৪:২৬ অপরাহ্ণ
অপতথ্য মোকাবিলা ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

অপতথ্য মোকাবিলা ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা কামনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ঢাকায় সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে ইফতার আয়োজনে তিনি এই আহ্বান জানান। একই দিনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবও রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা আপনার আশীর্বাদ চাই, বিশেষত একটি বিষয়ে—অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, যা আমাদের ধ্বংস করছে। কিছু মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়, কিন্তু কিছু মানুষ তা পছন্দ করে না। অপতথ্য ছড়ানো থেকে আমাদের রক্ষা করুন, বাকিটা আমরা সামলে নিতে পারব।”

অপতথ্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য অপতথ্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যা দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করছে। তিনি জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা এই সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।

জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস শিক্ষার্থীদের ঐক্যের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা যে ঐক্য তৈরি করেছে, তা দেশের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে সংহতি সৃষ্টি করেছে। আমরা অনেক বিষয়ে মতানৈক্য পোষণ করি, কিন্তু একটি বিষয়ে আমরা সবাই একমত—আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “গত বছরের ছাত্র আন্দোলন ছিল ঐতিহাসিক। শিক্ষার্থীদের কাছে অস্ত্র ছিল না, ছিল কেবল তাদের জীবন। তারা স্বাধীনতার জন্য, নিজেদের দেশ ফিরে পাওয়ার জন্য, নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য আন্দোলনে নেমেছিল। এটাই আমাদের নতুন বাংলাদেশ।”

অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরকে ‘আনন্দের বার্তা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “আমরা এখনো রমজানের মাঝামাঝি সময়ে, কিন্তু আপনার এই সফর যেন আগেভাগেই আমাদের জন্য ঈদ এনে দিলো। আপনার আগমনে আমাদের ঈদ এখনই শুরু হয়ে গেছে।”

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও ইফতার আয়োজনে বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রশংসা করেন।

এরপর, ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপ জরুরি। মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধ করা এবং সেখানে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও প্রতিবেশী দেশগুলোর চাপ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে একটি সমাধানের জন্য কাজ করার। এর প্রথম ধাপ হবে সহিংসতা বন্ধ করা এবং এমন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যা মিয়ানমারে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ সুগম করবে—যা স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন সহজ করবে।”

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, “আমাদের মিয়ানমারের ভেতরে মানবিক সহায়তা জোরদার করতে হবে, যাতে প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।” তিনি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের জন্য একটি মানবিক সহায়তা চ্যানেল তৈরির সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন এবং বলেন, “কিন্তু এটি স্পষ্টতই অনুমোদন ও সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল।”

জাতিসংঘ মহাসচিবের এই বক্তব্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে মিয়ানমার সরকারের অনড় অবস্থানের কারণে এতদিন প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু এখন যদি জাতিসংঘ সমর্থিত কোনো সংলাপ হয়, তবে সংকট সমাধানের একটি বাস্তবসম্মত পথ খুলে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বাস্তবিক কোনো অগ্রগতি হয়নি। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন দেখার বিষয়।

অন্যদিকে, অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতিসংঘের সহায়তা চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের ফলে ভুয়া খবর, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও গুজব এখন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ যদি এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়, তবে তা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এখন দেখার বিষয়, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ কতটা কার্যকর হয় এবং বাংলাদেশের সরকার এসব বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি