প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ তারিখে, তিনি ঢাকায় অবস্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। বৈঠকটি ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকটির মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়। এর মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম। জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং বলেন, “বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরো বেশি সহযোগিতা বৃদ্ধি করার জন্য সবসময় প্রস্তুত।”
বৈঠক শেষে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আন্তোনিও গুতেরেস একসঙ্গে একটি বিমানে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কক্সবাজারে পৌঁছে তারা নির্মাণাধীন কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে তাদের স্বাগত জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
কক্সবাজার সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করা। তারা উখিয়ায় অবস্থিত ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেন এবং সেখানে রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, এবং পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্র দেখতে পান। তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সরাসরি কথা বলেন এবং তাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে, প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এর সঙ্গে ইফতারও করেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ যে উদারতা ও মানবিকতা প্রদর্শন করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সহায়তা প্রয়োজন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে হবে, এবং এর জন্য মিয়ানমারে নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে এবং এই ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।”
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর বাংলাদেশ এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ আশা করে, এই সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমর্থন বাড়বে।