গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান চীনের, পশ্চিম তীর থেকে ১০ ভারতীয় উদ্ধার
গাজায় চলমান সংঘাতের অবসান চেয়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই শুক্রবার (৭ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যদি প্রভাবশালী দেশগুলো সত্যিই গাজার জনগণের প্রতি যত্নশীল হয়, তাহলে তাদের উচিত দ্রুত একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা এবং মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করা।” চীনের এই আহ্বান এমন এক সময় এলো, যখন গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা চলছে, তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ১০ ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিককে উদ্ধার করেছে ইসরাইল, যা নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলমান সংঘর্ষের পর গত ১৯ জানুয়ারি তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। প্রথম ধাপ শেষ হলেও ইসরাইল দ্বিতীয় ধাপে যেতে আপত্তি জানিয়ে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়, যা প্রত্যাখ্যান করে হামাস। হামাসের দাবি, দ্বিতীয় ধাপে যেতে হলে ইসরাইলকে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার, অবরোধ তুলে নেওয়া এবং পুনর্গঠনে সহযোগিতা করতে হবে। গাজায় যুদ্ধবিরতি রক্ষায় মিশর মধ্যস্থতা করছে এবং শনিবার (৮ মার্চ) কায়রোয় হামাস ও ইসরাইলি প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও হামাসের সরাসরি আলোচনার খবর নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের জানান, তারা হামাসের সাথে আলোচনা করছে, তবে হামাসকে কোনো নগদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওয়াশিংটনের এই কৌশলে ইসরাইলের নেতারা মোটেও খুশি নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন প্রশাসনের এই পদক্ষেপ নেতানিয়াহুর সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের একটি গ্রাম থেকে ১০ ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিককে উদ্ধার করেছে ইসরাইল। ইসরাইলের জনসংখ্যা ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই শ্রমিকদের এক মাস ধরে আটক করে রাখা হয়েছিল এবং তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ইসরাইলি বাহিনী মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের মুক্ত করে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ফিলিস্তিনিরা তাদের বেশি বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে পশ্চিম তীরে নিয়ে গিয়েছিল এবং ইসরাইলে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছিল।
টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব শ্রমিক মূলত ইসরাইলে কাজের জন্য গিয়েছিলেন। সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে ফিলিস্তিনিরা ভারতীয় শ্রমিকদের পাসপোর্ট ব্যবহার করে ইসরাইলে ঢোকার চেষ্টা করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওয়াইনেটনিউজ জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী একটি চেকপয়েন্টে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের আটকের পর ভারতীয় শ্রমিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইল ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের দেশটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে, যার ফলে দেশটির নির্মাণ শিল্পে ব্যাপক শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। এই ঘাটতি পূরণে ভারতীয় শ্রমিক নিয়োগের চুক্তি করা হয়। ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে প্রায় ১৬ হাজার ভারতীয় শ্রমিক ইসরাইলে গিয়েছেন। তবে পশ্চিম তীরে ভারতীয় শ্রমিকদের আটকে রাখার এই ঘটনা ইসরাইল-ফিলিস্তিন উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশ চীন যখন গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা ও ইসরাইলের ভারতীয় শ্রমিক উদ্ধার ইস্যু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি ইসরাইল, হামাস, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।