সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| দুপুর ২:১৭

শান্তির পথে ইউক্রেন? লন্ডনে সমর্থন পেল জেলেনস্কি, ট্রাম্পের সাথে চুক্তিতে রাজি

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ৩, ২০২৫ ৫:৪৭ অপরাহ্ণ
শান্তির পথে ইউক্রেন! লন্ডনে সমর্থন পেল জেলেনস্কি, ট্রাম্পের সাথে চুক্তিতে রাজি (1)

শান্তির পথে ইউক্রেন? লন্ডনে সমর্থন পেল জেলেনস্কি, ট্রাম্পের সাথে চুক্তিতে রাজি

বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি করতে গিয়ে ওয়াশিংটনে চরম উত্তেজনার পর সুর নরম করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে তুমুল বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়, ভেস্তে যায় খনিজ চুক্তি। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে অবস্থান পাল্টে রোববার (২ মার্চ) লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ চুক্তি করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

লন্ডন স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “অতীতের ঘটনা যাই হোক, আমাদের লক্ষ্য ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আমরা গঠনমূলক হতে চাই, এবং আমি বিশ্বাস করি যুক্তরাষ্ট্রও প্রস্তুত।” একই সঙ্গে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব বলেও মত দেন তিনি।

ট্রাম্প-জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্বিতণ্ডার পর ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপীয় নেতারা। রোববার লন্ডনে আয়োজিত “সিকিউর আওয়ার ফিউচার” শীর্ষক সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চার দফা পরিকল্পনা উত্থাপন করা হয়।

১. ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি।
২. ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শান্তি আলোচনায় কিয়েভের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৩. ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধে ইউরোপীয় নেতাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪. ইউক্রেনের নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক জোট গঠন ও দেশটিতে শান্তি নিশ্চিত করা।

বৈঠকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, “ইউরোপের যে কোনো সংঘাত একসময় সবার দুয়ারে এসে কড়া নাড়ে। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।”

তিনি আরও জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ইউরোপ একটি পরিকল্পনা তৈরি করবে, যা পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। সম্মেলনে ইউক্রেনকে ১৬০ কোটি পাউন্ড সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেন স্টারমার, যা দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত হবে।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্বিনিময়ের পর ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “শান্তির জন্য প্রস্তুত হলেই কেবল হোয়াইট হাউসে আবার স্বাগত জানানো হবে।” মার্কিন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ বলেন, “আমরা নিশ্চিত নই, জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করতে আমাদের লক্ষ্যের সঙ্গে একমত কিনা।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে দুই পক্ষকেই আলোচনার টেবিলে আসতে হবে। যত দ্রুত মানুষ বুঝতে পারবে যে যুদ্ধের পরিণতি ভয়াবহ, তত দ্রুত অগ্রগতি হবে।”

তবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। ইউরেশিয়া ডেমোক্রেসি ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক পিটার জালমায়েভ বলেন, “ইউরোপ যদি এবার জাগে, তাহলে তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে।”

লন্ডন সম্মেলনের দিকে নজর রেখেছিল রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, “গত ৫০০ বছরে বিশ্বে যত সংঘাত হয়েছে, তার বেশিরভাগই ইউরোপ থেকে শুরু হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, সংঘাত উসকে দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই।

এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা মিত্রদের কার্যক্রম নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া যদি নতুন কোনো আক্রমণ চালায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ইউরোপ এককভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না।

স্টারমার ও ম্যাক্রোঁ ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সমর্থন ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। তবে ইউরোপ যদি সংঘাত নিরসনে কার্যকর ভূমিকা নেয় এবং যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা অব্যাহত রাখে, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ