সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| রাত ১১:১৯

যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ শর্ত মানবে না কিয়েভ – উত্তেজনার মধ্যেই সফরের প্রস্তুতি

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫ ৭:০৩ অপরাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ শর্ত মানবে না কিয়েভ - উত্তেজনার মধ্যেই সফরের প্রস্তুতি

যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ শর্ত মানবে না কিয়েভ – উত্তেজনার মধ্যেই সফরের প্রস্তুতি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যকার সম্পর্ক এক নতুন মোড়ে পৌঁছেছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যে সামরিক সহায়তা তারা পেয়েছে, তার বদলে কোনও ঋণ শোধ করবে না কিয়েভ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে নিরাপত্তার কোনও নিশ্চয়তা দেবে না ওয়াশিংটন, বরং ইউরোপকে এগিয়ে আসতে হবে। দুই নেতার এই উত্তেজনার মধ্যেই আলোচনার জন্য জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফরের প্রস্তুতি চলছে, যেখানে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হতে পারে।

জেলেনস্কি কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা কৃতজ্ঞ, তবে আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে যদি এমন শর্ত থাকে যে নতুন সহায়তা বিনামূল্যে আসবে না, তাহলে আমি তা গ্রহণ করব না। ১০ সেন্ট ঋণ পরিশোধও আমি মানবো না।” তিনি আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তিতে ৫০০ বিলিয়ন ডলার, ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বা এমনকি ১০০ বিলিয়ন ডলার ঋণও অন্তর্ভুক্ত নেই। তিনি বলেন, “এটা আমাদের জন্য অন্যায্য হবে।”

তবে মার্কিন প্রশাসন বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছে। ট্রাম্প তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে চান না, বরং ইউরোপকে এগিয়ে আসতে বলেছেন। তার মতে, ইউক্রেনের সঙ্গে সম্ভাব্য খনিজ চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশাল সম্পদ বয়ে আনবে। তিনি বলেন, “এই চুক্তি আমাদের জন্য বড় অর্জন হতে যাচ্ছে। তবে আমার প্রথম লক্ষ্য যুদ্ধ বন্ধ করা।”

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তার বিপরীতে ওয়াশিংটনের বিনিময় কিছু পাওয়া উচিত। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা না পেত, তাহলে রাশিয়া অনেক আগেই দেশটি দখল করে নিত এবং যুদ্ধ দ্রুত শেষ হয়ে যেত।

জেলেনস্কি অবশ্য নিশ্চিত করেছেন, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি “প্রাথমিক অর্থনৈতিক চুক্তি” প্রস্তুত আছে, তবে এখনো এতে মার্কিন নিরাপত্তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, “এই চুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার ওপর।”

বিভিন্ন সূত্র বলছে, চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার দেওয়া হতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের নজর বিশেষ করে ইউক্রেনের রেয়ার আর্থ মিনারেলস বা বিরল খনিজ সম্পদে, যা মহাকাশ, প্রতিরক্ষা এবং পারমাণবিক শিল্পে ব্যবহৃত হয়। কিয়েভের ওপর এই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ওয়াশিংটন সফরে জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শুক্রবার জেলেনস্কির সাথে বৈঠকের পরই ট্রাম্প তার অবস্থান পরিষ্কার করবেন।

এদিকে, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে কিয়েভের যুদ্ধের অবসান প্রসঙ্গে নতুন আশার কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “আমি এই যুদ্ধ শেষ করার জন্য পুতিনের সঙ্গেও চুক্তি করতে পারব বলে মনে করি।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে ট্রাম্প-জেলেনস্কি আলোচনার ফলাফলের ওপর। যদি যুক্তরাষ্ট্র খনিজ চুক্তির বিনিময়ে সহায়তা অব্যাহত রাখে, তাহলে ইউক্রেন কিছুটা স্বস্তি পাবে। কিন্তু ট্রাম্প যদি পুরোপুরি হাত গুটিয়ে নেন, তাহলে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া কিয়েভের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে। এখন সবার চোখ শুক্রবারের বৈঠকের দিকে, যেখানে হয়তো নির্ধারিত হবে ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ