স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্তে সব জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তির প্রস্তাব দিল হামাস
গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্তে সব জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে সংগঠনটির মুখপাত্র হাজেম কাশেম জানান, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে এটি তাদের মূল শর্ত হিসেবে থাকবে।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাশেম বলেন, “আমরা এমন এক চুক্তির জন্য প্রস্তুত, যেখানে একসঙ্গে সব জিম্মি মুক্তি পাবে এবং এর বিনিময়ে গাজা থেকে দখলদার সেনারা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার হবে। এটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত করবে।”
হামাসের এই প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য হলো গাজায় চলমান যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এবং ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করা।
তবে এর বিপরীতে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির জন্য শর্ত দিয়েছে যে, হামাসকে তাদের সমস্ত সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে।
ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাস যদি অস্ত্র ত্যাগ না করে এবং তাদের সামরিক কার্যক্রম গুটিয়ে না নেয়, তবে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়।
তবে এই দাবি নাকচ করে হামাসের মুখপাত্র বলেন, “গাজা থেকে প্রতিরোধ বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি কেবল একটি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ। আমাদের অস্ত্র ত্যাগের কোনো প্রশ্নই আসে না।”
এদিকে হামাস বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চার জিম্মির মরদেহ ফেরত দেবে বলে জানিয়েছে। এছাড়া শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মুক্তি দেওয়া হবে ছয় জীবিত জিম্মিকে। এর আগে তিনজনকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, তবে মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধে সংখ্যাটি বাড়িয়ে ছয়জন করা হয়েছে।
হাজেম কাশেম বলেন, “মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জিম্মি মুক্তির সংখ্যা দ্বিগুণ করেছি। এর মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে চাই যে, আমরা যুদ্ধবিরতির সব শর্ত কার্যকরে প্রস্তুত।”
এই প্রস্তাবের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জিম্মিদের ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া উচিত নয়; বরং তাদের সবাইকে একসঙ্গে মুক্ত করতে হবে। ট্রাম্পের মতে, ইসরায়েল চাইলেই সব জিম্মিকে একবারে মুক্ত করতে পারে, তাই এই ‘আস্তে আস্তে মুক্তির পরিকল্পনা’ গ্রহণযোগ্য নয়।
জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরাও হামাসের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলের কাছে দাবি তুলেছেন, যেন একসঙ্গে সব জিম্মি মুক্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং মধ্যস্থতাকারীরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাসের এই নতুন প্রস্তাব ইসরায়েলকে চাপের মধ্যে ফেলতে পারে এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি সম্ভাব্য সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানের কারণে এই সমঝোতা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।
সূত্র: আলজাজিরা