দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া সম্পদ উদ্ধার ছাড়া বিপ্লব অসম্পূর্ণ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বিপুল সম্পদ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারলে কোনো সত্যিকারের বিপ্লব সম্ভব নয়—এমনটাই মনে করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি প্রশ্ন করেন, “দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদগুলো বাজেয়াপ্ত হলো না কেন? এসব সম্পদ সরকার কেন আইনি প্রক্রিয়ায় অধিগ্রহণ করেনি?” তাঁর মতে, যদি দ্রুত লুণ্ঠনকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ঋণ সমন্বয় করা যেত, তবে জনগণের মধ্যে কর প্রদান নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হতো।
গতকাল রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ই আর এফ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংলাপে ড. দেবপ্রিয় এসব কথা বলেন। ই আর এফ এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট র্যাপিড যৌথভাবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বাজেটের স্বচ্ছতা নিয়ে একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও কেন অর্থনৈতিক উদ্বেগ কাটছে না, সে বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেবপ্রিয় বলেন, “সরকারি উদ্যোগের ফল দৃশ্যমান নয়। মানুষের ধৈর্যের সীমা আছে, আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি “ডাল মে কুচ কালা হে” বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, এখন সেই ‘কালো’ ডালগুলো চিহ্নিত করার সময় এসেছে। আগামী রবিবার শ্বেতপত্র প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং পরদিন সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ‘ফুসফুস’ হলো ব্যাংকিং ও জ্বালানি খাত। হাসিনার আমলে এই দুটি খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। কর কাঠামোর পরিবর্তনের মাধ্যমে কিছু গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার বিষয়ও শ্বেতপত্রে উল্লেখ থাকবে।
দেবপ্রিয় আরও বলেন, “অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সাধারণ ধারণার চেয়েও জটিল। ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো এখন তাত্ক্ষণিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যে আশার সঞ্চার হয়েছে, তা যদি বর্তমান সরকার দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জনগণ চরম হতাশ হবে। এজন্য সরকারের উচিত আগামী ছয় মাসের পরিকল্পনা প্রকাশ করা, যাতে মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ, সরকারি ব্যয়, রাজস্ব আয় ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের বেপরোয়া নীতির কারণে আমরা এখন খেসারত দিচ্ছি।” তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “বর্তমানে ব্যাংক থেকে লুটপাট বন্ধ হয়েছে। এর সুফলও আমরা পাবো।” তিনি আরও জানান, আগামী ছয় মাস অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে। রিজার্ভ না বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমানো কঠিন হবে।
র্যাপিডের জরিপের ফলাফল তুলে ধরে অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, বাজেট ব্যয়ে স্বচ্ছতা মাত্র ৩৭ শতাংশ, যা যথেষ্ট নয়। ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে, কেবল পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। সাধারণ মানুষের বাজেট অংশগ্রহণ মাত্র ১১ শতাংশ এবং বাস্তবায়ন তদারকি ৩৭ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ারুল কবির জানান, “বাজেট বাস্তবায়নে বেশকিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে, তবে এটি ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টা চলছে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম। ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।