শুক্রবার, ১৩ই জুন, ২০২৫| সকাল ১১:৩৮

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ১২০, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৫৫ হাজার

প্রতিবেদক
staffreporter
জুন ১২, ২০২৫ ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ১২০, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৫৫ হাজার

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ১২০, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৫৫ হাজার

ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় একদিনেই কমপক্ষে ১২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন গাজায়। আহত হয়েছেন আরও অন্তত সাড়ে তিন শতাধিক। নিহতদের মধ্যে বহু মানুষ ছিলেন যারা ত্রাণ সংগ্রহ করতে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গাজার চিকিৎসা সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও বিমান হামলায় প্রাণ গেছে এসব মানুষের। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৭ জন ত্রাণপ্রার্থী এবং আহত হয়েছেন ৩৬৩ জন। এসব বিতরণকেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) নামের একটি বিতর্কিত সংস্থার মাধ্যমে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনপুষ্ট। বিতরণকেন্দ্রগুলো গাজার ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে অবস্থিত এবং সেখানেই বারবার হামলা চালানো হচ্ছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদিও এই বিতরণ ব্যবস্থাকে “নাটকীয় সাফল্য” হিসেবে দাবি করেছে, তবে মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ এর তীব্র সমালোচনা করেছে। কারণ, এসব বিতরণকেন্দ্রে উপচে পড়া মানুষের ভিড়ের মধ্যে গুলিবর্ষণের ফলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষ করে রাফাহ ও নেৎসারিম করিডোরে অবস্থিত বিতরণকেন্দ্রগুলোকে স্থানীয়রা “মানবিক গণহত্যার কেন্দ্র” হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। জিএইচএফ ২৭ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করার পর এসব কেন্দ্রে ত্রাণ নিতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২২০ জন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, তারা নেৎসারিম করিডোর এলাকায় “সতর্কতামূলক গুলি” চালিয়েছে, যা বহু প্রাণহানির কারণ হতে পারে।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস অভিযোগ করেছে, “ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করছে। তারা অভুক্ত মানুষদের ওপর গুলি চালাচ্ছে এবং খাদ্য অবরোধের মাধ্যমে জনগণকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”

জাতিসংঘ এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে জানিয়েছে, তারা জিএইচএফ-এর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণে অংশ নেবে না। কারণ, এতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সহায়তায় বেসরকারি ঠিকাদারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, জিএইচএফ-এর উদ্যোগ “চলমান নৃশংসতা থেকে মনোযোগ সরানোর কৌশল ও সম্পদের অপচয় মাত্র।” সংস্থাটি জানায়, “আমরা এবং অন্যান্য অভিজ্ঞ সংস্থা গাজায় কার্যকর ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে সক্ষম, কিন্তু ইসরায়েল আমাদের সে সুযোগ দিচ্ছে না।”

বর্তমানে ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএ এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সংস্থাগুলোকে গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না এবং খাদ্য সরবরাহে কঠোর অবরোধ বজায় রেখেছে। এতে করে গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা আরও বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ক্রিস নিউটন বলেছেন, “ইসরায়েল এমন এক সহায়তা ব্যবস্থা দাঁড় করিয়েছে, যা পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খল, সহিংস এবং জনগণকে দক্ষিণ দিকে ঠেলে দিয়ে অনাহারে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, জিএইচএফ প্রতিদিন একজনকে মাত্র ১,৭৫০ ক্যালরি খাদ্য সরবরাহের লক্ষ্য ঠিক করেছে, যা আন্তর্জাতিক জরুরি মানদণ্ডের চেয়েও কম এবং এমনকি ইসরায়েলের নিজস্ব ২০০৮ সালের মানদণ্ডের নিচেও পড়ে।

নিউটনের ভাষায়, “এই মাত্রার খাদ্য একটি অনাহার পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত ক্যালরির সমান, যা যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪০-এর দশকে পরিচালিত হয়েছিল।”

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, আর আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ সত্ত্বেও ইসরায়েল তার অবস্থান থেকে সরছে না।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি