সোমবার, ১২ই মে, ২০২৫| রাত ৪:৫৯

“কাশ্মীর এবার সত্যিই আলাদা হবে?”: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হুঁশিয়ারি

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৩০, ২০২৫ ৬:৫৯ অপরাহ্ণ
“কাশ্মীর এবার সত্যিই আলাদা হবে?”: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হুঁশিয়ারি

“কাশ্মীর এবার সত্যিই আলাদা হবে?”: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হুঁশিয়ারি

কাশ্মীর, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উত্তপ্ত অঞ্চল, আবারও এক নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এবার, পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একটি বিবৃতি দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, যেখানে তিনি কাশ্মীরিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলের অন্ধকার কক্ষ থেকে এই শক্তিশালী বার্তা এসেছে—কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আর ঠেকানো সম্ভব নয়।

ইমরান খান তার আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে এই মন্তব্য করেছিলেন, যা পরে তিনি তার এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন। তিনি বলেছেন, কাশ্মীরে ভারতীয় নিপীড়ন এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে পরিস্থিতিতে কাশ্মীরিরা শুধু স্বাধীনতা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছে না। এই কথাগুলো ইমরান খান সরাসরি তার সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন, এবং এর মাধ্যমে তিনি কাশ্মীরের জনগণের প্রতি পাকিস্তানের পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ইমরান খান আরও বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগ্রাসী মনোভাব এখন পুরো পাকিস্তানকে একে অপরের সঙ্গে আরও বেশি একতাবদ্ধ করেছে। তিনি দাবি করেন, যদিও তিনি পাকিস্তানের বর্তমান সরকারকে অবৈধ মনে করেন, তবুও পুরো পাকিস্তান এক কণ্ঠে মোদির যুদ্ধপ্রবণ মনোভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর মতে, মোদির এই আচরণ কেবল কাশ্মীর নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করা হয়, যা ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলস্বরূপ, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও তীব্র হয়েছে। নয়াদিল্লি তাদের ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিত করার মতো সিদ্ধান্তও নিয়েছে। কিন্তু ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের প্রস্তাব দেয়, যাতে ঘটনার প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে।

এদিকে, ইমরান খান তার বক্তব্যে আক্রমণাত্মক সুরে বলেন, “যখন একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়ার কথা, তখন মোদি সরকার উল্টো আমাদের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামার ঘটনাতেও একই ঘটনা ঘটেছিল। আমরা তখন পূর্ণ সহযোগিতা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভারত তা গ্রহণই করেনি।” এই মন্তব্যে তিনি আবারও ইঙ্গিত দেন, ভারতের বর্তমান সরকার আসলে শান্তি নয়, উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইছে।

কাশ্মীরিদের প্রতি ইমরান খানের সমর্থন একেবারে স্পষ্ট—তিনি জানিয়ে দেন, তিনি জাতিসংঘের রেজুলেশনের ভিত্তিতে কাশ্মীরিদের ‘স্ব-নিয়ন্ত্রণ’ অধিকারকে সমর্থন করবেন। এর পাশাপাশি, তিনি বলেন, “আরএসএস আদর্শে পরিচালিত ভারত শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি।” ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার পর কাশ্মীরে নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও জোরালো করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কারাগারের অন্ধকার কক্ষ থেকেও ইমরান খানের এমন প্রকাশ্য বার্তা, যদিও অনেকেই একে ‘রাজনৈতিক নাটক’ হিসেবে দেখছেন, তবুও এই প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক পরিসরে: কাশ্মীর কি এবার সত্যিই চূড়ান্ত দ্বন্দ্বের দিকে চলে যাবে? এই দ্বন্দ্ব কি শুধুমাত্র কাশ্মীরকে, নাকি পুরো উপমহাদেশকে এক ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেবে?

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ