পবিত্র রমজান ও ঈদের পরেও প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক ধারাবাহিকতা
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের পরেও দেশে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে প্রবাসীরা ১৭১ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৯ কোটি ডলারেরও বেশি আয় আসছে। এই গতি অব্যাহত থাকলে এপ্রিল মাস শেষে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এপ্রিলের প্রথম ১৯ দিনে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক এনেছে ৯ কোটি ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রায় ৯৯ কোটি ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলো ৩৩ লাখ ২০ হাজার ডলার প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে।
গত ঈদুল ফিতরের আগে মার্চ মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড ৩২৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন, যা একক মাস হিসেবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। রমজান মাসে এই রেকর্ড সৃষ্টির মাধ্যমে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ নতুন মাত্রা পায়। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটিই ছিল প্রথম ঈদ, এবং তার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ব্যাংকারদের মতে, অর্থ পাচার কমে আসায় এখন প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠাচ্ছেন। মার্চ মাসের প্রথম ২৪ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছিল ২৭০ কোটি ডলার, যা পুরো মাস শেষে ৩২৯ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। গত বছরের মার্চের তুলনায় এবার প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় ছিল ২৫২ কোটি ডলার।
প্রবাসী আয় বাড়ায় দেশে ব্যাংকগুলোর ডলারের সংকট অনেকটা কমে এসেছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, তা-ও কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যে প্রবাসী আয় কিনছে, যেখানে খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৪ টাকা ৩০ পয়সায়।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে টানা সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটির বেশি ডলার পাঠিয়ে আসছেন প্রবাসীরা। ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং জানুয়ারিতেও আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি আয় এসেছে।
সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৭৭ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ওই সময় প্রবাসী আয় ছিল ১ হাজার ৭০৭ কোটি ডলার।
প্রবাসী আয় বাংলাদেশের ডলার জোগানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস, কারণ এ আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা ব্যয় করতে হয় না। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়, আর বিদেশি ঋণ পরিশোধেও ডলার প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বাড়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ দ্রুত বাড়ছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।