শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ৩:২৮

ভারতকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে, এই জবাব কম হবে না – পাকিস্তান

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ২৪, ২০২৫ ৫:৩৪ অপরাহ্ণ
ভারতকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে, এই জবাব কম হবে না - পাকিস্তান

ভারতকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে, এই জবাব কম হবে না – পাকিস্তান

কাশ্মিরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি এতটাই তীব্র যে, দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের পুরনো সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছে ভারত। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রধান সীমান্ত ক্রসিং এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ১ মে’র মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশও দিয়েছে দিল্লি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “ভারতকে যোগ্য জবাব দেওয়া হবে, আর এই জবাব মোটেও হালকা হবে না।”
‘শিশুসুলভ’ পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করলো পাকিস্তান
একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসহাক দার বলেন, “ভারতের ঘোষণাগুলো শিশুসুলভ। এদের মধ্যে পরিণতির অভাব স্পষ্ট। প্রতিবার কোনো হামলার পরই ভারত আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব পদক্ষেপ ভারত নিয়েছে, তার বাস্তবতা নিয়ে আমরা জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (NSC) বৈঠকে বিশদভাবে আলোচনা করব এবং ভারতকে যোগ্য ও উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।”
ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনের অভিযোগ
কাশ্মিরের পেহেলগামে সম্প্রতি সংঘটিত ভয়াবহ হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ২৬ জন। আহত হয়েছেন আরও অনেক। এই হামলার পর থেকেই ভারতের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা অবস্থান আগের চেয়ে অনেক কঠোর হয়ে উঠেছে।
তবে পাকিস্তান এই হামলাকে “ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন” বলে দাবি করেছে। অর্থাৎ, পাকিস্তানের মতে এই হামলা ভারত নিজেরাই সাজিয়েছে— যেন আন্তর্জাতিক মহলের চোখে পাকিস্তানকে দায়ী করা যায়।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও এক টিভি চ্যানেলে বলেন, “এই সম্ভাবনাকে কখনোই পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না। অতীতেও ভারত এমন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।”
এনএসসি বৈঠকে কড়া সিদ্ধান্ত আসতে পারে
ভারতের এসব সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। বৈঠকে সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন। ইসহাক দার জানিয়েছেন, সাধারণত শুধুমাত্র বড় ধরনের হামলা বা বহিঃশত্রুর হুমকি দেখা দিলে এ ধরনের বৈঠক ডাকা হয়।
তিনি বলেন, “এখন আমাদের সময় হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার। ভারতের প্রচারণার জবাব শুধু কূটনৈতিকভাবে নয়, বাস্তব পদক্ষেপে দেওয়া হবে।”
দীর্ঘ দিনের সংঘাত ও পারস্পরিক অভিযোগ
কাশ্মির ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। ১৯৮৯ সাল থেকে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে স্বাধীনতাকামী আন্দোলন চলছে, যা বহু কাশ্মিরি মুসলিম সমর্থন করে থাকেন। অনেকে চান কাশ্মির পাকিস্তানের অংশ হোক, আবার কেউ কেউ চায় এটি হোক স্বাধীন রাষ্ট্র।
ভারতের দাবি, এটি একটি পাকিস্তান-উত্তেজিত সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন। অন্যদিকে পাকিস্তান এই আন্দোলনকে “বৈধ স্বাধীনতা সংগ্রাম” বলে আখ্যায় দেয়।
সামনের দিনগুলো আরও অস্থির?
কাশ্মিরে সাম্প্রতিক এই হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যেভাবে বেড়েছে, তাতে উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ফের অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দুই পক্ষের কেউই আপোষে যেতে রাজি নয়— বরং একে অপরকে দায়ী করে নিজেদের অবস্থান আরও কঠিন করে তুলছে।
এখন দেখার বিষয়, পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত আসে এবং সেটি পরিস্থিতিকে শান্ত করবে, নাকি আরও উত্তপ্ত করবে — সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি