গণহত্যার অভিযোগে ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ: চিফ প্রসিকিউটর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকারের ১২ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৯ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ও আইনি অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, এবং কামরুল ইসলাম। এছাড়াও তালিকায় আছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী এবং সালমান এফ রহমান। তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনায়েদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “তদন্ত সংস্থা এই গণহত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, এই অপরাধের জন্য দায়ী কেউই আইনের আওতার বাইরে থাকবে না।” তিনি আরও জানান, তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে চলছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনা দেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সময়ে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। এই ঘটনার বিচারের দাবি দেশজুড়ে জোরালোভাবে উঠেছে, এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎপরতা এই বিষয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশাকে আরও জোরদার করেছে।
এই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সাবেক সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হওয়ায় এটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অনেকে মনে করছেন, এই তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
তবে, এই প্রক্রিয়া নিয়ে জনমনে কিছু প্রশ্নও রয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং বিচারের গতি নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চিফ প্রসিকিউটর অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন যে, তদন্ত সংস্থা স্বাধীনভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছে, এবং শিগগিরই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
এই মামলার পরবর্তী ধাপে আইনি প্রক্রিয়া কীভাবে এগিয়ে যায় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় জনগণ এই প্রক্রিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।