শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:১১

আরও দুই বিদেশি রাষ্ট্রদূতকেও ফাদে ফেলতে চেয়েছিলেন মেঘনা

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৮, ২০২৫ ৮:০৮ অপরাহ্ণ
আরও দুই বিদেশি রাষ্ট্রদূতকেও ফাদে ফেলতে চেয়েছিলেন মেঘনা

আরও দুই বিদেশি রাষ্ট্রদূতকেও ফাদে ফেলতে চেয়েছিলেন মেঘনা

মডেল, উদ্যোক্তা এবং কথিত “মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন”-এর চেয়ারপারসন মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং সাবলীল ইংরেজি—এই তিনটি বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করে যেভাবে তিনি নিজেকে একজন প্রভাবশালী নারী হিসেবে তুলে ধরতেন, ঠিক সেভাবেই তার প্রতারণার জাল বিস্তার করেছিলেন উচ্চপর্যায়ের মানুষদের ঘিরে।
শুরুতে মেঘনার টার্গেট ছিল রাজধানীর গুলশান, বনানী এবং ধানমন্ডির অভিজাত পরিবারের তরুণরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজ নামে ফাউন্ডেশন খুলে শুরু করেন আরো পরিকল্পিত প্রতারণা। নিজের এই মোহনীয় রূপ ও পরিচিতিকে ব্যবহার করে ধীরে ধীরে ঢুকে পড়েন বিদেশি দূতাবাসগুলোর আশপাশে।
সৌদি রাষ্ট্রদূতই শুধু নয়, আরও দুই কূটনীতিককে ফাঁদে ফেলার অভিযোগ
সর্বশেষ আলোচনায় আসে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের নাম, যাকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মেঘনা। কিন্তু সেই চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে তার জন্য কাল। রাষ্ট্রদূতের অভিযোগে সরব হয় কূটনৈতিক কোর কমিটি, যারা বিষয়টি জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) চ্যান্সেরি বিভাগকে। এরপরই মেঘনার বিরুদ্ধে শুরু হয় তদন্ত এবং তাকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তবে তদন্তে উঠে এসেছে, মেঘনা শুধু সৌদি রাষ্ট্রদূতের টার্গেটে ছিলেন না—তিনি আরও অন্তত দুই দেশের রাষ্ট্রদূতকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন। ডিবি সূত্রে জানা যায়, এক সময়কার আলোচিত সেই বিদেশি রাষ্ট্রদূত, যিনি ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় স্বচ্ছ ভোটের দাবিতে সক্রিয় ছিলেন—তাকেও প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছিলেন মেঘনা। বর্তমানে তিনি আর বাংলাদেশে নেই। আর দ্বিতীয়জন হচ্ছেন সার্কভুক্ত একটি দেশের রাষ্ট্রদূত, যিনি এখনও ঢাকায় কর্মরত। সম্মান রক্ষায় তারা কেউই প্রকাশ্যে অভিযোগ করেননি, তবে দুজনের থেকেই প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।
মোবাইল ও পেনড্রাইভে ‘ডার্ক কানেকশন’
ডিবি জানিয়েছে, মেঘনার মোবাইল ও পেনড্রাইভ থেকে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, যা তাকে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ দিতে পারে। এসব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার মোবাইল থেকে উদ্ধার হওয়া যোগাযোগের সূত্র ধরে তদন্ত এগোচ্ছে আরও গভীরে।
“সিরিয়াস ওয়ার্ক” নামে অর্থ আদায় ও ভয়ভীতি প্রদর্শন
তদন্তে আরও জানা গেছে, “সিরিয়াস ওয়ার্ক” নামে একটি ফান্ডে টাকা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের চাপ দিতেন মেঘনা। কোনো অনুষ্ঠান বা সামাজিক আয়োজনে গিয়ে রাষ্ট্রদূতদের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করতেন, পরে ফোন করে পরিচয় বাড়াতেন এবং সম্পর্ক তৈরি করতেন। একপর্যায়ে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে ব্ল্যাকমেইল শুরু করতেন—ভুয়া ছবি তৈরি করে বা কথোপকথনের স্ক্রিনশট দেখিয়ে ডিজিটাল মামলার ভয় দেখাতেন।
বাসায় অভিযান, ফেসবুক লাইভ, এবং বিতর্কিত ‘প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন’
গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে মেঘনাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। গ্রেপ্তারের মুহূর্তে মেঘনা ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করেন, পুলিশ পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি দরজা ভেঙে তার বাসায় প্রবেশ করে। ১২ মিনিটের লাইভটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি ডিলিট হয়ে যায়।
পরদিন ১০ এপ্রিল আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনাকে ৩০ দিনের জন্য আটক রাখার নির্দেশ দেয়। যদিও কী কারণে এই ‘প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন’ করা হলো, সে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—যদি তার বিরুদ্ধে অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ থাকে, তাহলে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি কেন?
সহযোগী সমীর গ্রেপ্তার, ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ
১০ এপ্রিল মেঘনার সহযোগী দেওয়ান সমীরকেও গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায়। এ পর্যন্ত এই মামলায় ২০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি।
ডিবি কর্মকর্তার মন্তব্য
মেঘনার বিষয়ে ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, তিনি অত্যন্ত ‘চতুর ও পরিকল্পিত’ প্রতারক। বহু ভিআইপিকে টার্গেট করে ফান্ডের নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন। শুধু ফান্ড নয়, মানসম্মান আর সামাজিক অবস্থানকেই তিনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের সদ্যবিদায়ী অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শেষ কথা
মেঘনা আলমের ঘটনা একটি বড় ধরনের প্রতারণার চিত্র তুলে ধরছে, যেখানে কূটনৈতিক মহল থেকে শুরু করে দেশের ভিআইপিদেরও শিকার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—এই প্রতারণা কতদূর বিস্তৃত ছিল? আরও কতজন এর শিকার হয়েছেন, যারা হয়তো এখনও প্রকাশ্যে আসেননি?

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত
মার্কিন শুল্ক ছাড়ে স্বস্তির হাওয়া প্রযুক্তি খাতে

মার্কিন শুল্ক ছাড়ে স্বস্তির হাওয়া প্রযুক্তি খাতে

ভোরে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ভোরে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সঙ্গে গোপনে রাশিয়ার মধ্যস্থতা

সেভ দ্য চিলড্রেনে সিনিয়র ম্যানেজার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

সেভ দ্য চিলড্রেনে সিনিয়র ম্যানেজার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

ট্রাম্পের চাপের কারণে ভারত শুল্ক কমাল

ট্রাম্পের চাপের কারণে ভারত শুল্ক কমাল

কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ‍’ নামে নতুন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা চলছে: হাসনাত

‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ‍’ নামে নতুন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা চলছে: হাসনাত

ট্রাম্পের অভিষেকের পর যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে চান জেলেনস্কি

ট্রাম্পের অভিষেকের পর যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে চান জেলেনস্কি

বকেয়া ঋণ আদায়ে এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি নিলামে তুলল ইসলামী ব্যাংক

বকেয়া ঋণ আদায়ে এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি নিলামে তুলল ইসলামী ব্যাংক

চরের জীবন: নদীর বুকে সংগ্রামী মানুষের গল্প

চরের জীবন: নদীর বুকে সংগ্রামী মানুষের গল্প