শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২৫

লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৬, ২০২৫ ৭:২০ অপরাহ্ণ
লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ

লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ

লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সাক্ষাৎ হয়েছে। এই সাক্ষাতে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ আবু তাহের এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন। গত রোববার (১৩ এপ্রিল) তারেক রহমানের বাসায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

দেশে ফিরে ডা. শফিকুর রহমান একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এই সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি তাঁর জন্য দোয়া করেছি এবং তাঁর কাছেও দোয়া চেয়েছি।” তবে এই বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত ৪ এপ্রিল ব্রাসেলস সফরে যান। সেখান থেকে তিনি নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ আবু তাহেরকে নিয়ে লন্ডনে পৌঁছান। লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি গত সোমবার (১৪ এপ্রিল) দেশে ফিরে আসেন।

এদিকে, বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে এই সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করেন। তিনি লিখেন, “ইউরোপ সফর শেষে লন্ডনে পৌঁছে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ আবু তাহের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই সাক্ষাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন। বেগম জিয়া বর্তমানে তাঁর ছেলের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।”

মারুফ কামাল আরও লিখেন, “জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে বেগম জিয়ার এই সাক্ষাতে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি। এটি কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল, নাকি রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা বোঝার জন্য আমাদের সামনের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।” তিনি উল্লেখ করেন, বেগম জিয়া লন্ডনে যাওয়ার আগে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও তাঁর বাসায় সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করেছিলেন, যদিও সেই বৈঠক নিয়েও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও লন্ডন প্রবাস

বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে লন্ডনে তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে উন্নত চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি গত কয়েক বছর ধরে জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থানের খবর বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

সাক্ষাতের রাজনৈতিক তাৎপর্য

জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একে অপরের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে কাজ করেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দলের মধ্যে সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হয়েছে। লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বের এই সাক্ষাৎ রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সাক্ষাৎ কেবল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে সৌজন্যমূলক হতে পারে, অথবা এর পেছনে রাজনৈতিক কোনো এজেন্ডা থাকতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে নির্বাচন ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে দুই দলের সমন্বয় কীভাবে এগোবে, তা নিয়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেকে মনে করছেন। তবে কোনো পক্ষই আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশ না করায় এটি এখনো রহস্যের মধ্যেই রয়ে গেছে।

জামায়াতের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই সাক্ষাৎ দুই দলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে পারে। তবে এটি কেবল বেগম জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া ও শুভকামনা বিনিময়ের একটি সুযোগও হতে পারে।”

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

মারুফ কামালের ফেসবুক পোস্টের পর সামাজিক মাধ্যমে এই সাক্ষাৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকরা এটিকে দুই দলের ঐক্যের একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছেন। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, এই বৈঠকের ফলাফল বোঝার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন।

একজন বিএনপি সমর্থক ফেসবুকে লিখেছেন, “বেগম জিয়ার সঙ্গে জামায়াত নেতাদের সাক্ষাৎ আমাদের আশা জাগিয়েছে। আমরা চাই, সবাই মিলে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করুক।” অন্যদিকে, কেউ কেউ এই সাক্ষাতের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ

বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর সমর্থকরা উদ্বিগ্ন। লন্ডনে তিনি নিয়মিত চিকিৎসার পাশাপাশি বিশ্রাম নিচ্ছেন। তাঁর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল, তবে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জামায়াত নেতাদের সাক্ষাৎ তাঁর জন্য মানসিক সমর্থন হিসেবে কাজ করেছে বলে অনেকে মনে করেন।

লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের উপস্থিতি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কের ধারাবাহিকতাকেও তুলে ধরে। তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডন থেকে বিএনপির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, এবং তাঁর সঙ্গে এই ধরনের বৈঠক দলের ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের এই সাক্ষাৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিতে পারে। এটি কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ হোক বা রাজনৈতিক আলোচনার সূচনা, এর প্রভাব বোঝার জন্য সময়ের প্রয়োজন। বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকরা এই বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা সামনের দিনগুলোই বলে দেবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি