গাজার মানুষ না খেয়ে আছে, চিকিৎসা পাচ্ছে না: ডব্লিউএইচও
গাজার মানবিক সংকট নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে জাতিসংঘের পাঠানো ৭৫ শতাংশ ত্রাণ গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়েছে ইসরায়েল। এর ফলে সেখানকার মানুষ খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জরুরি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গাজায় চলমান অবরোধ এবং সংঘাত পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়েছে ডব্লিউএইচও।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, “গাজার মানুষ এখন চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অনেকে না খেয়ে আছে, চিকিৎসার অভাবে জীবন হারাচ্ছে।” তিনি জানান, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের জন্য গাজার মানুষ হাহাকার করছে। তিনি আরও বলেন, গত ২৩ মার্চ ইসরায়েলি হামলায় ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী ও সহায়তাকর্মী নিহত হয়েছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০-র বেশি স্বাস্থ্যকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।
ড. গেব্রিয়েসুস জোর দিয়ে বলেন, “আমরা চাই ত্রাণ সরবরাহ দ্রুত শুরু হোক। আহতদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং একটি কার্যকর যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” তিনি গাজার হাসপাতালগুলোর অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বেশিরভাগ হাসপাতাল এখন কার্যত অচল। ওষুধের মজুত প্রায় শেষ হয়ে গেছে। পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েছে। বর্তমানে গাজার প্রতিজন মানুষ দিনে মাত্র ৩ থেকে ৫ লিটার পানি পাচ্ছে, যা মানবিক চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
ডব্লিউএইচওর এই বিবৃতি গাজার মানবিক সংকটের গভীরতা তুলে ধরেছে। সংস্থাটি জানায়, চলমান সংঘাতের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম বা জনবল নেই। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ত্রাণ সরবরাহে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ গাজায় ত্রাণ প্রবেশে অবাধ সুযোগ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই পরিসংখ্যান গাজার মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা তুলে ধরছে।
এই সংকটের মধ্যে গাজার সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাদ্যাভাবে অনেকে ক্ষুধার সম্মুখীন, আর চিকিৎসার অভাবে ছোট ছোট অসুস্থতাও মারাত্মক হয়ে উঠছে। ডব্লিউএইচওর আহ্বান, এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও তৎপর হতে হবে। ত্রাণ সরবরাহ, চিকিৎসা সহায়তা এবং যুদ্ধবিরতি ছাড়া গাজার মানুষের দুর্ভোগ কমানো সম্ভব নয়।