হাসিনা সরকারের সব গুম-খুনের বিচার হবে: তারেক রহমান
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, তাদের দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে গত ১৬ বছরে সংঘটিত গুম, খুনসহ সব অন্যায়ের বিচার নিশ্চিত করবে। তিনি এই মন্তব্য করেন ১৬ মার্চ গুলশান-২ এর একটি রেস্টুরেন্টে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামক সংগঠনের আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল বক্তব্য প্রদানকালে।
তারেক রহমান তার বক্তব্যে গুম ও খুনের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, “গুম, খুন হওয়া পরিবারগুলোর প্রতি যে অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।” তিনি আরও বলেন, “আগামীতে একটি নির্বাচিত সরকার আসলে, অভিযুক্তদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কারণ আমরা যদি তাদের প্রতি অন্যায়ের বিচার না করতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আবারও অন্যায় সংগঠিত হতে পারে।”
তারেক রহমান জোর দিয়ে বলেন যে, ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্যবিচার নিশ্চিত করে দেশের মানুষকে বোঝাতে হবে যে, অন্যায়কারী যে-ই হোক, তাদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। তিনি বলেন, “বিগত দিনে যারা নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই তারা ভুক্তভোগী হয়েছেন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমিও আপনাদের বাইরে নই। আমি ও আমার হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাইটিও আপনাদেরই অংশ। কারণ আমরাও আপনাদের মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম।”
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এই ইফতার মাহফিলে গুম ও খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদের সম্মান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এতে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক এমপি রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ হোসেন বকুল প্রমুখ।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে গুম ও খুনের ঘটনা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করে আসছে যে, তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
গুম ও খুনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে এসেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্র এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ সরকারকে মানবাধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
তারেক রহমানের এই বক্তব্য বিএনপির ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। তবে, এটি বাস্তবায়ন করতে হলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।
গুম ও খুনের ঘটনার বিরুদ্ধে সুশীল সমাজের সক্রিয় ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। তাদের প্রচেষ্টা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
তারেক রহমানের এই ঘোষণা গুম ও খুনের শিকার পরিবারগুলোর মধ্যে আশার সঞ্চার করতে পারে। তবে, এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।