ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়: মাহমুদ আব্বাস
ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের যেকোনো পরিকল্পনাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেছেন, “ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়।”
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বার্তাসংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাহমুদ আব্বাস আবারও স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, ফিলিস্তিনের কোনো অংশ, গাজা, পশ্চিম তীর বা জেরুজালেম—কিছুই ছাড় দেওয়া হবে না।
ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফার তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফাতাহর কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভার উদ্বোধনী বক্তৃতায় এসব কথা বলেন প্রেসিডেন্ট আব্বাস।
আব্বাস বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো পরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেওয়া হবে না। আমরা আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে আমাদের অধিকার রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাবো।”
তিনি আরও বলেন, “কিছু আন্তর্জাতিক শক্তি ও আঞ্চলিক দেশ ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে, কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি—আমাদের ভূখণ্ডের এক ইঞ্চিও ছাড় দেওয়া হবে না।”
আব্বাস তার বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেন, “ফিলিস্তিনি সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক বৈধতা ও ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগ মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে বৈরুতে অনুষ্ঠিত আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত আরব শান্তি উদ্যোগ অনুসারে, ১৯৬৭ সালের সীমানার মধ্যে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সেইসঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্ত হিসেবে ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ স্বাধীনতা ও রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমের স্বীকৃতি চাওয়া হয়েছিল।
আব্বাস বলেন, “আমরা শান্তির পক্ষে, কিন্তু সেটা হতে হবে ন্যায্য ও আইনসম্মত উপায়ে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাই।”
এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের বাস্তুচ্যুতির প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও-এর সঙ্গে এক বৈঠকে আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বলেন, “ফিলিস্তিনের জনগণকে উচ্ছেদ করার যেকোনো প্রচেষ্টা আমরা সমর্থন করি না। তাদের ন্যায্য অধিকার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।”
মোহাম্মদ বিন জায়েদের এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, “এটি আমাদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। ফিলিস্তিন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ানোর জন্য আমরা আরও কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করবো।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শুধু নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষার লড়াই করছি না, আমরা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছি। বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশকেই ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে হবে।”
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে মাহমুদ আব্বাসের এই বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযান ও পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ চলছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে আব্বাস বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে চাই। তবে যদি আমাদের অস্তিত্বের ওপর হুমকি আসে, তাহলে আমরা আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবো।”
ফিলিস্তিনি নেতারা বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ন্যায়সংগত সমঝোতার জন্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর আরও জোরালো ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। তারা আশা করছেন, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আরও কার্যকর উদ্যোগ নেবে।