‘গাজা পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন ট্রাম্প’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা উপত্যকা নিয়ে তার আগের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন বলে দাবি করেছে মিশর। দেশটির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে এক বৈঠকে এই পরিবর্তন এসেছে। ওই বৈঠকে বাদশাহ আবদুল্লাহ ট্রাম্পকে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেন এবং তাকে বিষয়টি নতুনভাবে ভাবতে রাজি করান। মিশরীয় কর্মকর্তা বলেন, বাদশাহর যুক্তিগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন ট্রাম্প এবং সহমর্মিতাও দেখিয়েছেন।
এর আগে ট্রাম্প গাজার ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক জর্ডান ও মিশরে পাঠিয়ে উপত্যকাকে খালি করে ফেলার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গাজাকে নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে, যেখানে কোনো ফিলিস্তিনি শাসন থাকবে না। কিন্তু বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠকের পর সেই অবস্থান থেকে পিছু হটেছেন তিনি। মিশর এবং অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলো এই ঘটনাকে তাদের কূটনৈতিক জয়ের প্রতীক হিসেবে দেখছে।
মিশরীয় ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার হলেও অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল। যদিও প্রকাশ্যে বাদশাহ আবদুল্লাহ ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেননি, তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে ইসলামপন্থি উগ্রপন্থার উত্থান ঘটবে এবং এতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রপন্থি সরকারগুলোর পতন ঘটতে পারে।
এদিকে গাজায় যুদ্ধপরবর্তী পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ইসরায়েল কিছু ভারী যন্ত্রপাতির প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস নতুন করে আরও জিম্মি মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েল গাজার বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতিও দিয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে হামাস। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহ আটকে রেখে চুক্তি লঙ্ঘন করছে, যা গাজার জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে, গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থা নিয়ে মিশরের একটি পরিকল্পনা রয়েছে, যা ইতিমধ্যে আরব বিশ্বের সমর্থন পেয়েছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা একটি স্বতন্ত্র প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে পরিচালিত হবে, যেখানে আরব দেশগুলোর সমন্বিত ভূমিকা থাকবে। এই পরিকল্পনা নিয়ে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের জন্য বৃহস্পতিবার সেখানে যাচ্ছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। মিশর সরকার জানিয়েছে, এই বৈঠকে গাজার পুনর্গঠন এবং ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রমশ জটিলতা বাড়লেও, মিশর, সৌদি আরব এবং জর্ডানসহ বিভিন্ন আরব দেশ একত্রিত হয়ে কূটনৈতিক সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এই অঞ্চলে নতুন সমঝোতার সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই