বৃহস্পতিবার, ১৯শে জুন, ২০২৫| রাত ১:২৭

তেহরানে ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি কর্মকর্তার বাসভবন, নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ

প্রতিবেদক
staffreporter
জুন ১৮, ২০২৫ ২:২২ অপরাহ্ণ
তেহরানে ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি কর্মকর্তার বাসভবন, নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ

তেহরানে ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি কর্মকর্তার বাসভবন, নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ

ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরাইলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ফার্স্ট সেক্রেটারি ওয়ালিদ ইসলামের বাসভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে হামলার সময় তিনি বাসায় না থাকায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। সোমবার ইসরাইল এই হামলা চালায়।

তেহরানের তৃতীয় জোনের জর্ডান এলাকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসবাস করতেন। ওই এলাকায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। হামলার আগে ইসরাইল পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে যেতে বলা হয়। ফলে প্রাণহানি সীমিত থাকলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফার্স্ট সেক্রেটারি ওয়ালিদ ইসলাম জানান, “আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, আশপাশে আর কিছুই নেই।”

হামলার পরপরই বাংলাদেশ সরকার সেখানকার কর্মকর্তা ও নাগরিকদের এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। বর্তমানে তারা তেহরানের অন্য একটি এলাকায় অবস্থান করছেন। তবে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার এখন নাগরিকদের রাজধানীর বাইরেও সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক জানান, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার। তিনি বলেন, “আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা তেহরানে অবস্থান করছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

ইরানে ইসরাইল টানা পাঁচদিন ধরে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে তেহরানের রাস্তায় তীব্র যানজট এবং পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় অনেক বাংলাদেশি ফোন করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাহায্য চাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ওয়ালিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “অনেকে বলছেন, এখানকার পরিস্থিতি ভালো না ভাই, আমাদের বাঁচান। এমন আকুতি সহ্য করা কঠিন।”

বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য ইরানে যাওয়া ২০ জন নাগরিকও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। মূলত তারা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য গিয়েছিলেন এবং হাসপাতাল এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তবে সম্প্রতি এক হাসপাতালে হামলার ঘটনায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। দূতাবাস তাদের শান্ত রাখতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে এবং নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে।

এ ছাড়া বেড়াতে গিয়ে অনেকে আটকা পড়েছেন। এমনই একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক ইকরাম আর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, তার স্ত্রী ইরানি নাগরিক। গত মে মাসে ইরানে আসেন তারা, তবে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত ১৫ জুনে দেশে ফেরা সম্ভব হয়নি।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, ইরানে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে তেহরান এবং ঢাকায় দুটি ‘হটলাইন’ চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একশ জনের মতো বাংলাদেশি এই হটলাইনে যোগাযোগ করে নিরাপদ আশ্রয়ের অনুরোধ জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দূতাবাসের ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এসব বাংলাদেশিকে আপাতত তেহরানের কাছাকাছি ভারামিন শহরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সাবেহ শহরে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও হচ্ছে।

তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ভারামিনও তেহরানেই অবস্থিত হওয়ায় সেখানে হামলা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ওয়ালিদ ইসলাম জানান, “এখন সেটা করা সম্ভব নয়, কারণ ইরানে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যদি একদিনের জন্যও যুদ্ধবিরতি হয়, আমরা তখনই সবাইকে ইরানের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করবো।”

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি