বুধবার, ১৪ই মে, ২০২৫| দুপুর ১২:০৬

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে

প্রতিবেদক
staffreporter
মে ৮, ২০২৫ ১১:১১ পূর্বাহ্ণ
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছানোর পর থেকেই দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। ৭ মে (বুধবার) সকালে ঢাকার শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়, তবে এই প্রভাব শুধু পুঁজিবাজারেই সীমাবদ্ধ থাকেনি—বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স এবং কূটনৈতিক ভারসাম্যেও নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, সংঘাত যদি যুদ্ধে রূপ নেয় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে বাংলাদেশকে বহুমুখী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। তাই এখনই কৌশলগত পরিকল্পনা ও আগাম প্রস্তুতির উপর গুরুত্ব আরোপ করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশের বাণিজ্য ব্যবস্থাও এই উত্তেজনার কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ভারত বাংলাদেশের প্রধান আমদানিকারক দেশ হওয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি সীমান্ত বাণিজ্য, ট্রানজিট এবং নৌ-রুটে পণ্য পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এর ফলে তৈরি পোশাক, ওষুধ ও হালকা প্রকৌশল পণ্যের রফতানিতে বিলম্ব বা অর্ডার বাতিলের ঝুঁকি রয়েছে।

এই অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দক্ষিণ এশিয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করতে পারেন, যার ফলে বিদ্যমান ও সম্ভাব্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পেতে পারে। অবকাঠামো, টেক্সটাইল, আইটি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতে চলমান অনেক প্রকল্প থমকে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বৈদেশিক বাণিজ্য, পণ্য পরিবহন, রফতানি আদেশ এবং সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকায় এই উত্তেজনার প্রভাব সরাসরি আমদানি-রফতানির ওপর পড়তে পারে। একই সঙ্গে, ভারত যদি সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াতে বাধ্য হয়, তবে তা তাদের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সহযোগিতা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য সরাসরি যুদ্ধের হুমকি না হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তা উদ্বেগজনক। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়গুলো সামরিক উত্তেজনার কারণে বিঘ্নিত হতে পারে।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানিয়েছেন, যুদ্ধ হলে আমদানি-রফতানির পথ ব্যাহত হবে, ফলে কাঁচামালের সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়বে, যা তৈরি পোশাক খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এই পরিস্থিতিতে নিরাপদ বাণিজ্য কৌশল অবলম্বনের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিকল্প বাজার খোঁজা, বহুমুখীকরণ এবং কূটনৈতিক প্রস্তুতি এখন অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা ও দামের ওঠানামার ওপর নজর রেখে রফতানিনির্ভর খাতে সুসংগঠিত কৌশল নিতে হবে।

শেয়ার বাজারে ইতোমধ্যে বড় ধরনের ধস নেমেছে। ৭ মে দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচক ১৪৯ পয়েন্ট বা প্রায় ৩ শতাংশ কমে ৪,৮০২ পয়েন্টে দাঁড়ায়—যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক বিক্রির চাপ তৈরি হয়। মাত্র ৯টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, আর ৩৮৫টির দর কমেছে।

মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান জানান, যুদ্ধ পরিস্থিতি শেয়ার বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এফআইডির চিঠি অনুযায়ী, ১১ মে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে—যেখানে বাজার স্থিতিশীল করতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তবে এই ইতিবাচক পদক্ষেপ বাজারে তৎক্ষণাৎ আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেনি।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়াবে এবং মূল্যস্ফীতি তীব্র হতে পারে। পরিবহন খরচ ও কৃষি উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে খাদ্যদ্রব্যের দামও বাড়বে।

প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীর ওপর যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে পারে। শ্রমবাজারে স্থবিরতা তৈরি হলে রেমিট্যান্স আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সবশেষে, কূটনৈতিক ভারসাম্যও এই উত্তেজনায় চাপে পড়তে পারে। বাংলাদেশকে এখন এমন কৌশল নিতে হবে, যাতে কোনো পক্ষের প্রতি অতিরিক্ত নমনীয়তা না দেখিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখা যায়। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এখন সময়ের দাবি।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ