সুচিকিৎসার দাবিতে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের মানববন্ধন
গত জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া আলোচিত অভ্যুত্থানে আহত হয়েছিলেন যারা, আজ তাদের কেউ কেউ হুইলচেয়ারে, কেউ বা ব্যান্ডেজ মোড়া শরীরে দাঁড়ালেন রাস্তায়। গলায় ঝোলানো প্ল্যাকার্ড আর কণ্ঠে তীব্র ক্ষোভ— একটাই দাবি, “আমাদের সুচিকিৎস
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান—যা সাধারণভাবে পঙ্গু হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত—তার সামনেই মানববন্ধনে অংশ নেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত বেশ কয়েকজন।
চিকিৎসার নামে প্রতারণা, অভিযোগ তানভীরের
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে মো. তানভীর হোসেন নামে এক আহত ব্যক্তি বলেন, “আমাদের নামেই চিকিৎসা দেখানো হয়, অথচ বাস্তবে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। ডাক্তাররা আসে বটে, কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয় না। সবকিছু আমাদের নিজেদের টাকায় কিনে চিকিৎসা চালাতে হচ্ছে।”
তার গলায় কষ্ট ঝরে পড়ে আরও বেশি, যখন তিনি বলেন, “ডাক্তার বলেছিলেন রগে সমস্যা, অপারেশন লাগবে। এখন সেই অপারেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে আমরা হয়তো আর সুস্থ জীবন ফিরে পাব না।”
ঈদের দিনও কেউ খবর নেয়নি
মানববন্ধনে উঠে আসে অবহেলার অভিযোগও। তানভীর বলেন, “আমাদের হাত ধরেই যে সংগঠন—জাতীয় নাগরিক পার্টি—তারা এখন আমাদের খোঁজ নেয় না। ঈদের সময়টাতেও তারা একটা ফোন পর্যন্ত করেনি। অথচ আমরা সেই রক্ত দিয়েছি, যার ওপর ভর করে এই সংগঠন গড়ে উঠেছে।”
স্লোগানে স্লোগানে প্রতিবাদ
আহতদের মানববন্ধনে ছিল বেশ কিছু জোরালো স্লোগান।
“আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ”,
“রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়”,
“দফা এক, দাবি এক — সুচিকিৎসা, সুচিকিৎসা।”
এইসব স্লোগানে বোঝা যাচ্ছিল, ক্ষোভের আগুন এখনও নিভে যায়নি।
হেলথ কার্ডে কিছুই হয় না!
আন্দোলনকারীরা বলেন, “আমাদের হাতে হেলথ কার্ড ধরিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই কার্ড নিয়ে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, সেটি দিয়ে কোনো কাজই হয় না। এক রকম লোকদেখানো ব্যবস্থায় আমাদের ঠকানো হচ্ছে।”
তারা আরও জানান, বিদেশে চিকিৎসার “টাকার অভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।” তারা প্রশ্ন তোলেন, “যারা রক্ত দিল, তাদের জন্য কি রাষ্ট্রের কাছে কিছুই নেই?”
সরকার উৎসবে মশগুল, আহতরা অবহেলায়
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আহতদের বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল হতাশা ও ক্ষোভ।
তারা বলেন, “যারা সরকার চালাচ্ছেন, তারা উৎসব আর আনন্দে মশগুল। কিন্তু আমরা যারা জীবন দিয়ে মূল্য চুকিয়েছি, তাদের চিকিৎসার কোনো সুব্যবস্থা নেই। কবে আমাদের কথা ভাববে রাষ্ট্র?”
আহত আন্দোলনকারীরা জানান, তাদের প্রধান ও একমাত্র দাবি—সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা। প্রয়োজন হলে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে।
একজনের কণ্ঠে উচ্চারিত একটি বাক্য যেন সবকিছু ছাপিয়ে“যখন রক্ত দরকার ছিল, আমরা ছিলাম সামনে। এখন আমরা কোথায় যাব?”
মানবিক বিবেচনায় এখন সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর। এই মানুষগুলোকে অবহেলায় ফেলে রাখা মানে আমাদের সামাজিক দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। ওঠে—
জন্য তালিকা তৈরি হলেও বারবার বলা হয়—া চাই।”