ইউক্রেনের সামি অঞ্চলে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় অন্তত ২০ নিহত
ইউক্রেনের সামি অঞ্চলে রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে রাশিয়ার চালানো মিসাইল হামলায় অন্তত ২০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। সামির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আরতেম কোবজার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই হামলা এলাকাটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে এবং স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হামলার পরপরই এক বিবৃতিতে বলেন, “রুশ বাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে, যাদের এই যুদ্ধের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।” তিনি এই হামলাকে ‘বর্বর’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে হামলার ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, সামির রাস্তায় পোড়া গাড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে। এই দৃশ্যগুলো হামলার তীব্রতা ও সাধারণ মানুষের ওপর এর প্রভাব প্রতিফলিত করছে।
ইউক্রেন গত কয়েক দিন ধরে সামি অঞ্চল নিয়ে সতর্কতা জারি করে আসছিল। তারা আশঙ্কা করছিল, রুশ বাহিনী এই অঞ্চল দিয়ে তাদের অগ্রগতি বাড়াতে পারে। এই সতর্কতার মধ্যেই রোববারের মিসাইল হামলা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং লাখো মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেন ও রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনার চেষ্টা করছেন। তবে এই প্রচেষ্টা এখনো কোনো ফলপ্রসূ ফলাফল আনতে পারেনি।
ইউক্রেনের কিছু কর্মকর্তা ও নাগরিক মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন রাশিয়ার প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ছে। সামির হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। ইউক্রেনের একজন নাগরিক সেরহি স্টারনেনকো এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “আজ রোববার, ইস্টারের আগে খ্রিষ্টান ছুটির দিন। সামিতে বেসামরিক মানুষের ওপর বর্বর হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে রাশিয়া। এটি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে। কিন্তু ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকোফ এর জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ দেবেন।”
এই হামলা শুধু সামি অঞ্চলের জন্যই নয়, বরং সমগ্র ইউক্রেনের জন্য একটি বড় ধাক্কা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানালেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেখা যায়নি। ইউক্রেনের নাগরিকরা তাদের দেশের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য বিশ্বের বৃহত্তর সমর্থন কামনা করছেন।
ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, তারা এই হামলার জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করবে। এদিকে, সামির বাসিন্দারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তাদের প্রিয়জনদের হারানোর শোক পালন করছেন এবং এই অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি, টাইমস অব ইসরায়েল