বৃহস্পতিবার, ৩রা জুলাই, ২০২৫| রাত ৯:৪১

শেষ প্রান্তে বিবিয়ানা: দেশে বড় গ্যাস সংকটের আশঙ্কা

প্রতিবেদক
staffreporter
জুলাই ৩, ২০২৫ ৪:১৭ অপরাহ্ণ
শেষ প্রান্তে বিবিয়ানা: দেশে বড় গ্যাস সংকটের আশঙ্কা

শেষ প্রান্তে বিবিয়ানা: দেশে বড় গ্যাস সংকটের আশঙ্কা

দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। সরকারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন এই খনি থেকে মজুতের একেবারে শেষ প্রান্তের গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, নতুন অনুসন্ধান কূপগুলোতে যদি গ্যাস না পাওয়া যায়, তবে দেশে বড় ধরনের গ্যাস সংকট তৈরি হতে পারে।

৩০ জুনের তথ্য অনুযায়ী, পেট্রোবাংলা দেশের সব গ্যাসক্ষেত্র মিলিয়ে প্রতিদিন ১,৮৩৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে বিবিয়ানার একক অবদান ৯২৭ মিলিয়ন ঘনফুট— যা দেশের মোট গ্যাসের প্রায় অর্ধেক (৫০.৪৬%)। অর্থাৎ, বিবিয়ানা এখনও দেশের গ্যাস সরবরাহে সবচেয়ে বড় ভরসা। এই খনির উৎপাদন হঠাৎ কমে এলে গ্যাস সংকট গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।

মজুতের চিত্র ভয়াবহ

হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্যমতে, বিবিয়ানার মোট প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মজুত ছিল ৫,৩২১.৪ বিসিএফ, যার মধ্যে ৪,৫৩১ বিসিএফ গ্যাস ইতোমধ্যেই উত্তোলন হয়ে গেছে। ফলে অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৭৮৯.৭ বিসিএফ। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই খনি দেশের অর্ধেক গ্যাস জুগিয়ে এলেও এখন প্রায় সব কূপ থেকেই মজুত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।

বর্তমানে খনির ২৬টি কূপের মধ্যে মাত্র ১১টি থেকে নিয়মিত গ্যাস উত্তোলন চলছে। গ্যাসচাপ কমে যাওয়ায় কিছু কূপে কম্প্রেসার বসিয়ে গ্যাস তোলা হচ্ছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ১,২৫০–১,৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হতো, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯২৭ মিলিয়ন ঘনফুটে।

কূপভিত্তিক মজুতের হিসাব

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় কূপ বিবি ৬০ এবি থেকে ইতোমধ্যে উত্তোলিত হয়েছে প্রায় ৮৭ শতাংশ গ্যাস। বিবি ৭০ কূপে উত্তোলনের হার ৮৯ শতাংশ। বিএইচ ১০, ২০ এবি, ২০ সি ও ২০ ডি কূপগুলোতে তুলনামূলকভাবে কিছুটা গ্যাস অবশিষ্ট (৩২.৩%) থাকলেও বাকি কূপগুলোরও ৮০ শতাংশের বেশি গ্যাস উত্তোলিত হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, “দু-এক বছরের মধ্যে বিবিয়ানার উৎপাদন আরও কমে যাবে। আমাদের আমদানি সক্ষমতা এখনও ১ হাজার এমএমসিএফডি-র নিচে, তাই এলএনজি দিয়েও চাহিদা মেটানো কঠিন হবে। এখনই বিকল্প উৎস ও অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।”

অন্যদিকে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, “বিবিয়ানাকে ঘিরে বহু আগে থেকেই শঙ্কা ছিল, এখন সেটি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। সরকারি পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। সাময়িকভাবে আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করা গেলেও, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর ওপরই জোর দিতে হবে।”

সার্বিকভাবে বিবিয়ানার অবস্থা দেশের জ্বালানি খাতে এক সংকটজনক সময়ের বার্তা দিচ্ছে। সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে সামনে বাংলাদেশকে বড় রকমের গ্যাস বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হতে পারে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি