শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের দাবি নাকচ করল ভারত, আলোচনা এখনও চলমান
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সব ধরনের পণ্যের ওপর থেকে ভারত শুল্ক তুলে নিতে সম্মত হয়েছে—প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন দাবি দ্রুত খণ্ডন করেছে ভারত সরকার। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্থানীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, বাণিজ্য আলোচনাগুলো এখনো চলছে এবং “সবকিছু চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছুই চূড়ান্ত নয়” বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই মন্তব্য আসে একদিন পর, যখন দোহায় এক ব্যবসায়িক সম্মেলনে ট্রাম্প দাবি করেন, ভারত এমন একটি বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর আর কোনও শুল্ক আরোপ করা হবে না। একই সময়ে তিনি অ্যাপলের সিইও টিম কুককে জানান যে, তিনি চান না অ্যাপল ভারতে উৎপাদন করুক, কারণ ভারত “বিশ্বের সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপকারী দেশগুলোর একটি।” ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, ভারত নিজের বাজার নিয়ে নিজেই যেন দায়িত্ব নেয়।
বর্তমানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। এস জয়শঙ্কর বলেন, যেকোনও চুক্তি পারস্পরিকভাবে লাভজনক এবং কার্যকর হতে হবে। “চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এর ওপর কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অনুচিত হবে,” বলেন তিনি। বিশ্লেষক অজয় শ্রীবাস্তবের মতে, ভারত যদি গাড়ি ও কৃষিপণ্য বাদ দিয়ে অন্যান্য পণ্যের ওপর শুল্ক শূন্য করে দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ রপ্তানিই ‘জিরো ফর জিরো’ নীতির আওতায় আসবে। তবে তিনি যোগ করেন, দুই দেশকেই সমানভাবে শুল্ক হ্রাস করতে হবে।
বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৯০ বিলিয়ন ডলার। তবে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা কমিয়ে আনতে আগ্রহী ট্রাম্প প্রশাসন। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত এপ্রিলে ভারতীয় পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার ৯০ দিনের বিরতির সময়সীমা শেষ হবে ৯ জুলাই।
এই সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীন নিজেদের মধ্যে আমদানি শুল্ক হ্রাস করতে সম্মত হয়েছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ভারতের ক্ষেত্রেও এমন একটি চুক্তির মাধ্যমে শুল্ক কমানোর আলোচনা এগোচ্ছে।
সম্প্রতি ভারত একাধিক বাণিজ্যিক চুক্তির দিকে অগ্রসর হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে স্বাক্ষরিত নতুন চুক্তিতে হুইস্কি ও গাড়ির মতো সংরক্ষিত খাতেও শুল্ক হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও এ বছরের মধ্যেই একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রচেষ্টা চলছে।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের একতরফা দাবি বিতর্কের জন্ম দিলেও, ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে—কোনো চূড়ান্ত চুক্তি এখনো হয়নি এবং সবকিছু এখনও আলোচনার পর্যায়ে।