ভারতে পারমাণবিক পদার্থ চুরির তদন্ত চায় পাকিস্তান, আইএইএ-কে আহ্বান
ভারতে পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় পদার্থ চুরির একাধিক ঘটনার তদন্ত চেয়ে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-কে আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে দেশটি ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানিয়েছে। শুক্রবার (১৬ মে) পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ডন-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার পাকিস্তান আইএইএ-এর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানায়, যেন ভারতে পারমাণবিক পদার্থ চুরি এবং কালোবাজারি সম্পর্কিত ঘটনাগুলোর একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নজরদারি চালানোর জন্য ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাম্প্রতিক আহ্বানকেও সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “ভারতে একের পর এক পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় পদার্থ চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আইএইএ-এর উচিত উদ্বিগ্ন হওয়া। এ ঘটনাগুলো দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার স্পষ্ট দুর্বলতা প্রকাশ করে এবং ভারতে তেজস্ক্রিয় পদার্থের কালোবাজারের অস্তিত্বও প্রমাণ করে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “পাকিস্তান চাইছে, এ বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং একই সঙ্গে ভারত যেন নিজ দেশের পারমাণবিক স্থাপনা ও অস্ত্রভাণ্ডারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।”
পাকিস্তানের এই বক্তব্যের পেছনে রয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্য। তিনি সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মিরের শ্রীনগরে সেনাদের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, “আমি মনে করি, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো আইএইএ-এর তত্ত্বাবধানে নেওয়া উচিত।” এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান জানায়, এমন মন্তব্য আইএইএ-এর দায়িত্ব ও কার্যক্ষমতা সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক।
সম্প্রতি দুই দেশ বড় ধরনের সামরিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গেছে। ভারতের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাল্টাপাল্টি অভিযানে সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়, যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় ভারত ও পাকিস্তান। যদিও যুদ্ধবিরতির কিছুদিন পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কঠোর অবস্থান জানিয়ে বলেন, “ভারত কোনো ধরনের পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল সহ্য করবে না এবং সন্ত্রাসীদের আশ্রয়ে থাকা যেকোনো স্থানে আঘাত হানবে।”
এর জবাবে পাকিস্তান দাবি করে, ভারতের এমন বক্তব্য আসলে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও প্রতিরোধনীতির প্রতি তাদের গভীর অনিরাপত্তাবোধের বহিঃপ্রকাশ। তারা আরও বলে, ভারতের আগ্রাসন রুখে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রচলিত সামরিক শক্তিই যথেষ্ট।
পাকিস্তান ভারতের পারমাণবিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানাতে গিয়ে কয়েকটি সাম্প্রতিক ঘটনার কথা উল্লেখ করে। যেমন, ২০২৩ সালে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে পাঁচজনকে একটি তেজস্ক্রিয় ডিভাইসসহ আটক করা হয়, যেটি ভারতের ভাভা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার থেকে চুরি হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। অন্য এক ঘটনায় ১০ কোটি ডলার মূল্যের ক্যালিফোর্নিয়াম নামের একটি অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ২০২১ সালেও ক্যালিফোর্নিয়াম পাচারের তিনটি ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তির ফলে ভারতের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। তারা মনে করে, এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।