টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন বিরাট কোহলি, শেষ হলো এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়
বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা বিরাট কোহলি আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। সোমবার (আজ) দীর্ঘ ১৪ বছরের লাল বলের যাত্রার ইতি টানার ঘোষণা দেন সাবেক এই ভারতীয় অধিনায়ক। এতদিন ধরে চলা গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, আর সাদা পোশাকে মাঠে দেখা যাবে না তাঁকে। এখন থেকে কেবল ওয়ানডে ফরম্যাটেই তাকে পাওয়া যাবে, টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট থেকে একপ্রকার সরে দাঁড়ালেন কোহলি।
২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন কোহলি। শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাডিলেডে ১১৬ রানের ইনিংস খেলে জানান দেন তার সক্ষমতার। এরপর টানা এক যুগ ধরে লাল বলের ক্রিকেটে একের পর এক রেকর্ড গড়ে গেছেন তিনি। ১২৩টি টেস্ট খেলে করেছেন ৯,২৩০ রান, যেখানে তাঁর গড় ৪৬.৮৫। এর মধ্যে ৩০টি শতক ও ৩১টি অর্ধশতক রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
কোহলি ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অসংখ্য রেকর্ডের মালিক। তিনি একমাত্র ভারতীয় যিনি পাঁচটি ক্যালেন্ডার বর্ষে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রান করেছেন (২০১২, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৮ ও ২০২৩)। অধিনায়ক হিসেবে করেছেন সর্বোচ্চ ২০টি টেস্ট সেঞ্চুরি এবং নেতৃত্বে থেকে টেস্টে সর্বোচ্চ ৫,৮৬৪ রান। ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ২৫৪ রানের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ।
ডাবল সেঞ্চুরির দিক থেকেও তিনি ছিলেন শীর্ষে—ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৭টি দ্বিশতক, যার মধ্যে ৬টিই এসেছে তার অধিনায়কত্বে। টানা চারটি টেস্ট সিরিজে ডাবল সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ডও তার দখলে। নেতৃত্বে ৪০টি টেস্ট জয় এনে দেন দেশকে, যা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। কেবল গ্রায়েম স্মিথ (৫৩), রিকি পন্টিং (৪৮) ও স্টিভ স্মিথ (৪১) তার ওপরে আছেন।
২০১৮ সালে আইসিসি টেস্ট ব়্যাঙ্কিংয়ে ৯৩৭ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছান কোহলি। সেই বছরই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতে প্রথম এশিয়ান অধিনায়ক হিসেবে ইতিহাস গড়েন। এছাড়া টেস্টে টানা ৯টি সিরিজ জয়ের রেকর্ডও তারই।
ভারতীয়দের মধ্যে শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড় ও সুনীল গাভাস্কারের পর টেস্টে কোহলির রানসংখ্যা সর্বোচ্চ। বিশ্ব ক্রিকেটে তিনি আছেন ১৯তম স্থানে। তার অস্ট্রেলিয়া সফরের ৭টি টেস্ট সেঞ্চুরি ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সর্বাধিক।
বিরাট কোহলির টেস্ট থেকে বিদায় এক বিশাল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি, যেটা ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সোনালি হরফে লেখা থাকবে। ক্রিকেটভক্তদের মনে তিনি আজীবন থেকে যাবেন একজন সাহসী ব্যাটসম্যান, একনিষ্ঠ অধিনায়ক এবং এক অনন্য কিংবদন্তি হিসেবে।