পুনর্ব্যবহৃত তেল: স্বাস্থ্যের নীরব শত্রু
বাঙালি রান্নায় তেল একটি অপরিহার্য উপাদান। প্রতিদিনের বেশিরভাগ খাবারেই তেলের ব্যবহার হয়। অনেক সময় রান্নার পর বেঁচে যাওয়া তেল রেখে দেওয়া হয় পরে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু এই অভ্যাস কতটা নিরাপদ, তা অনেকেই জানেন না।
পোড়া বা বারবার গরম করা তেল শরীরের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, তেল একাধিকবার গরম করলে তাতে বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগ তৈরি হয়, যা অ্যাসিডিটি, বুক জ্বালা, হজমের সমস্যা থেকে শুরু করে হার্ট অ্যাটাক, পারকিনসন এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে ‘এইচএনই’ নামক এক ধরনের ক্ষতিকর উপাদান তেলে তৈরি হয়, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকগুণ বাড়ায়।
একই তেল বারবার গরম করলে তেলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং তাতে থাকা আগের খাবারের অদৃশ্য কণা রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়, যা খাবারের স্বাদ ও গুণমান দুই-ই কমিয়ে দেয়। একই সঙ্গে এ ধরনের তেল ব্যবহারে হজমে সমস্যা, পাকস্থলীর জ্বালা, এমনকি লিভার ও ক্যানসারের ঝুঁকি পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। আরও উদ্বেগজনক হলো, বারবার গরম করা তেলে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে ফ্রি র্যাডিক্যালও তৈরি হয়, যা কোষের ক্ষতি করে এবং বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে।
তবে কখনো যদি রান্নার প্রয়োজনে পুরনো তেল ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন—ভাজার পর তেল ঠাণ্ডা করে ছেঁকে নেওয়া, যাতে কোনো খাদ্য কণা না থাকে। এরপর তা এয়ারটাইট বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। পুরনো তেল ব্যবহারের আগে দেখতে হবে সেটি ঘন বা আঠালো হয়ে গেছে কিনা, কিংবা রঙ পরিবর্তিত হয়েছে কিনা। যদি এসব লক্ষণ দেখা যায়, তবে সেই তেল ফেলে দেওয়া উচিত। ডিপ ফ্রাই করা খাবারের তেল কখনই দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা উচিত নয়।
খাদ্য শুধু আমাদের ক্ষুধা মেটায় না, এটি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জ্বালানিও। তাই রান্নার প্রতিটি উপাদান সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। বারবার গরম করা তেল বা পুনর্ব্যবহৃত তেল সুস্বাস্থ্যের বড় শত্রু হতে পারে। সুস্থ ও দীর্ঘজীবনের জন্য বিশুদ্ধ তেল ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব। সতর্ক থাকলে অনেক বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।