ভারতের ২১টি বিমানবন্দর বন্ধ, যুদ্ধাবস্থার আভাসে অস্থির দক্ষিণ এশিয়া
পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত আজাদ কাশ্মিরে ভারতের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি চরম উত্তেজনাকর হয়ে উঠেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সরকার তাদের সামরিক বাহিনীকে পাল্টা হামলার অনুমোদন দিয়েছে। ইসলামাবাদ ঘোষণা করেছে, এই হামলার জন্য ভারতকে “মূল্য দিতে হবে”।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত সরকারও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশটির উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কমপক্ষে ২১টি বিমানবন্দর আগামী ১০ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, পাকিস্তান সীমান্তের কাছে সামরিক অভিযান শুরুর পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব বিমানবন্দর আগামী ১০ মে ভোর ৫টা ২৯ মিনিট পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য বন্ধ থাকবে। বিমানবন্দরগুলো জম্মু-কাশ্মির, লেহ, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান ও গুজরাটে অবস্থিত। ফলে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বহু ফ্লাইট স্থগিত বা বাতিল হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে বন্ধ থাকা বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে রয়েছে: জম্মু, শ্রীনগর, লেহ, অমৃতসর, চণ্ডীগড়, পাতিয়ালা, হালওয়ারা, শিমলা, ধর্মশালা, জোধপুর, বিকানের, জয়সালমের, কিশনগড়, ভুজ, জামনগর, রাজকোট, মুন্দরা, পোরবন্দর, কান্ডলা, কেশোদ, গোয়ালিয়র এবং হিন্ডন। এসব বিমানবন্দরের অনেকগুলো সামরিক ও বেসামরিক উভয় ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
ফ্লাইট বাতিলের প্রভাব পড়ে দেশীয় বিমান সংস্থাগুলোর ওপরও। ইন্ডিগো বাতিল করেছে ১১টি বিমানবন্দর থেকে ১৬৫টির বেশি ফ্লাইট। এয়ার ইন্ডিয়া ও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসও একাধিক বিমানবন্দর থেকে তাদের ফ্লাইট স্থগিত করেছে। স্পাইসজেট ও আকাশ এয়ারও লেহ, শ্রীনগর, জম্মু ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের ফ্লাইট বাতিল করেছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট Flightradar24-এ দেখা যাচ্ছে, নয়া দিল্লির উত্তরাঞ্চলে প্রায় কোনো বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলছিল না, একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল দেহরাদুন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে। মার্কিন এয়ারলাইন্স আমেরিকান ও ইউনাইটেড তাদের দিল্লিগামী ফ্লাইট বাতিল করেছে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ভারতে আসা অনেক ফ্লাইট বিকল্প বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছে।
এয়ারলাইন্সগুলো সামাজিক মাধ্যমে যাত্রীদের ফ্লাইট স্ট্যাটাস যাচাই করে ভ্রমণের পরিকল্পনা করার পরামর্শ দিচ্ছে এবং বাতিল ফ্লাইটের জন্য বিনামূল্যে রিশিডিউল বা সম্পূর্ণ অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধাবস্থার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় পুরো অঞ্চলজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে আন্তর্জাতিক মহল শান্তি ও সংযমের আহ্বান জানালেও বাস্তবতা বলছে, দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ এখন এক বিপজ্জনক মোড়ের দিকে এগোচ্ছে।