বুধবার, ১৪ই মে, ২০২৫| দুপুর ১:০১

ঘন ঘন অসুস্থতার পেছনে কারণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

প্রতিবেদক
staffreporter
মে ৬, ২০২৫ ৫:৫৭ অপরাহ্ণ
ঘন ঘন অসুস্থতার পেছনে কারণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

ঘন ঘন অসুস্থতার পেছনে কারণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, কেন কিছু মানুষ প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন, আর অন্যরা বছরজুড়ে সুস্থ থাকেন? এর পেছনে রয়েছে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, জীবনযাত্রার ধরন এবং জেনেটিক্সের জটিল মেলবন্ধন। কেউ কেউ জন্ম থেকেই বেশি প্রতিরোধক্ষমতা নিয়ে জন্মান, আবার কারও প্রতিদিনকার অভ্যাস ও পুষ্টি শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে। এই বিষয়গুলো বুঝলে অসুস্থতার ঝুঁকি কমানো এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ানো অনেক সহজ হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা শরীরকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে, প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত—সহজাত ও অভিযোজিত। সহজাত প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেয় এবং ত্বক, সাদা রক্তকণিকা (নিউট্রোফিল, ম্যাক্রোফেজ) ও অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমে প্রথম সুরক্ষা দেয়। অন্যদিকে, অভিযোজিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা (টি-কোষ ও অ্যান্টিবডি) দীর্ঘমেয়াদে সংক্রমণ ঠেকাতে কাজ করে এবং পূর্ব সংক্রমণের স্মৃতি রেখে ভবিষ্যতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়।

তবে জেনেটিক্সের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। কিছু মানুষের দেহে এমন জিনগত বৈশিষ্ট্য থাকে, যা অ্যান্টিবডি উৎপাদন বা সাইটোকাইন নিঃসরণে দুর্বলতা সৃষ্টি করে। যেমন, কমন ভ্যারিয়েবল ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি (CVID)-এর মতো অবস্থা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়, ফলে ঘন ঘন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাবও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের বড় কারণ। দীর্ঘ সময় ধরে চাপ থাকলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা লিম্ফোসাইট ও সাইটোকাইন উৎপাদন কমিয়ে দেয়। অপর্যাপ্ত ঘুম প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ ও টি-কোষের কার্যকারিতা হ্রাস করে, ফলে শরীর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের সামনে দুর্বল হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ব্যক্তি প্রতি রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি।

এই দুর্বলতা কাটাতে নিয়মিত ব্যায়াম, মেডিটেশন ও শিথিলকরণ কৌশল খুবই কার্যকর। পাশাপাশি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি (সাইট্রাস ফল, বেল পেপার), ভিটামিন ডি (সূর্যালোক, চর্বিযুক্ত মাছ), এবং জিঙ্ক (বাদাম, ডাল, কুমড়ার বীজ) রোগ প্রতিরোধ কোষের কাজকে ত্বরান্বিত করে। যথেষ্ট পানি পান করলে দেহের লিম্ফ সঞ্চালন ভালো হয়, যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।

অতএব, যারা ঘন ঘন অসুস্থ হন, তারা শুধু ওষুধেই নির্ভর না করে এসব মৌলিক স্বাস্থ্যাভ্যাস ঠিক রেখে নিজেকে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে পারেন। আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত শক্তিশালী হবে, অসুস্থতার ঝুঁকি ততটাই কমে যাবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ