সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| রাত ৮:০৬

৬ জিম্মি মুক্তির পর, ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি স্থগিত করেছে ইসরায়েল

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ৩:২৬ অপরাহ্ণ
৬ জিম্মি মুক্তির পর, ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি স্থগিত করেছে ইসরায়েল

৬ জিম্মি মুক্তির পর, ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি স্থগিত করেছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি আরও এক দফা সংকটের মুখে পড়ল। হামাস শনিবার ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিলেও বিনিময়ে প্রতিশ্রুত ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি ইসরায়েল স্থগিত করেছে। এর আগেও জিম্মি বিনিময়ের প্রক্রিয়া নাটকীয় মোড় নেয়, যখন হামাস ভুলবশত এক ইসরায়েলি নারীর মরদেহের পরিবর্তে অজ্ঞাত ফিলিস্তিনি নারীর মরদেহ ইসরায়েলে পাঠিয়ে দেয়। এই ভুলকে কেন্দ্র করে নতুন করে সংঘাতের শঙ্কা তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত শুক্রবার হামাস শিরি বিবাসের মরদেহ ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে সাময়িকভাবে প্রশমিত হয়।

শনিবার মুক্তি পাওয়া ছয় ইসরায়েলি জিম্মির মধ্যে ছিলেন তাল শোহাম, আভেরা মেঙ্গিস্তু, এলিয়া কোহেন, ওমের ভেঙ্কার্ট, ওমের শেম টভ এবং হিশাম আল সাঈদ। প্রথম পাঁচজনকে বিভিন্ন স্থানে রেড ক্রসের হাতে তুলে দেওয়া হয়, আর বেদুইন বংশোদ্ভূত হিশাম আল সাঈদকে শেষ মুহূর্তে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে তিনি ভুল করে গাজায় প্রবেশ করেছিলেন, এরপর থেকে তিনি হামাসের বন্দি ছিলেন। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী হামাস এখন পর্যন্ত ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিলেও, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ শনিবারই জানায় যে, হামাসের ‘অপমানজনক অনুষ্ঠান’-এর কারণে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।

ইসরায়েলের দাবি, হামাস মুক্তি পাওয়ার আগে জিম্মিদের মঞ্চে দাঁড় করিয়ে বক্তব্য দিতে বাধ্য করছে এবং মৃত জিম্মিদের কফিন জনসমক্ষে বহন করাচ্ছে। তারা এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে। হামাস অবশ্য এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেনি, তবে তারা বরাবরই ইসরায়েলকে দখলদার শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলছে, বন্দিদের বিনিময়ের ক্ষেত্রে তারা ন্যায়সঙ্গত পথেই এগোচ্ছে।

তবে দুই পক্ষের এই টানাপোড়েনে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত গাজার সাধারণ মানুষ। তারা যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে কি না, কিংবা নতুন করে হামলার শিকার হতে হবে কি না—এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর শিরি বিবাস, তার স্বামী ও দুই সন্তানকে গাজায় জিম্মি করা হয়েছিল। পরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিরি ও তার দুই সন্তান নিহত হন। হামাস দাবি করেছে, সেই হামলার তীব্রতায় শিরির মরদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ায় ভুলবশত অন্য মরদেহ ইসরায়েলকে দেওয়া হয়। তবে ইসরায়েলি পক্ষ এ দাবিকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে এবং হামাসকে ‘প্রতারণার’ দায়ে অভিযুক্ত করে।

এই ঘটনার জেরে যখন যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল, তখনই হামাস শুক্রবার রাতে শিরির মরদেহ ইসরায়েলে হস্তান্তর করে। রেড ক্রস গাজার খান ইউনিস থেকে মরদেহটি সংগ্রহ করে ইসরায়েলের সেনাদের হাতে তুলে দেয়। এখন এটি ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তেল আবিবের আবু কারিম ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি না দেওয়ার ইসরায়েলি ঘোষণায় নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শনিবার ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, যাদের মধ্যে ৪৪৫ জন যুদ্ধ চলাকালে আটক হয়েছিলেন, বাকিরা দীর্ঘদিন বা আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। তবে মুক্তির প্রক্রিয়া স্থগিত হওয়ায় হামাস এখন নতুন করে ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই জিম্মি বিনিময়ের টানাপোড়েনের মধ্যেই নতুন করে গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। যুদ্ধবিরতি একদিকে মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দিলেও, বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে শঙ্কা থেকেই যায়—এই সাময়িক শান্তি অচিরেই আবার ভয়াবহ সংঘাতে রূপ নেবে কি না।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ