চলতি বছর একের পর এক ধাক্কা খাচ্ছেন বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খান। বছরের শুরুতেই নিজ বাড়িতে হামলার শিকার হওয়ার পর এবার আরও বড় ধাক্কা এল আদালত থেকে। ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, নবাব পরিবারের উত্তরাধিকারসূত্রে দাবি করা প্রায় ১৫ হাজার কোটির সম্পত্তি হারাতে যাচ্ছেন সাইফ। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সম্প্রতি তার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
এই আইনি জটিলতার শুরু ২০১৪ সালে, যখন মধ্যপ্রদেশ সরকার ঘোষণা করে যে, ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানের সম্পত্তি ‘এনেমি প্রোপার্টি অ্যাক্ট ১৯৬৮’-এর আওতায় শত্রু সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ নবাবের বড় মেয়ে আবিদা সুলতান ১৯৫০ সালে পাকাপাকি ভাবে পাকিস্তানে চলে যান এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। এই যুক্তিতে সরকার দাবি করে, যেহেতু সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাকিস্তানে চলে গেছেন, তাই সেটিকে বিদেশি সম্পত্তি বা ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ২০১৫ সালে আদালতের শরণাপন্ন হন সাইফ আলি খান। দীর্ঘদিন মামলার স্থগিতাদেশ থাকলেও, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্ট সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেয়। আর ২০২৫ সালের জুলাইয়ে আদালত সাইফের আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেয়।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন আসে— কেন এই বিশাল সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হচ্ছে? আসলে, ১৯৪৭ সালের আগে ভোপাল ছিল একটি প্রিন্সলি স্টেট, যার শাসক ছিলেন নবাব হামিদুল্লাহ খান। তার তিন কন্যার মধ্যে বড় ছিলেন আবিদা সুলতান, যিনি পাকিস্তানে চলে যান। দ্বিতীয় কন্যা সাজিদা সুলতান ভারতে থেকে যান এবং বিয়ে করেন সাইফের দাদা ইফতিকার আলি খান পতৌদিকে। ফলে সাজিদা ও তাঁর উত্তরসূরিরা এই সম্পত্তির বৈধ দাবিদার হন। ২০১৯ সালে আদালতও সাজিদা সুলতানকে বৈধ উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং সাইফের সম্পত্তিতে অংশ থাকার কথা মেনে নেয়।
তবে সরকারের যুক্তি, যেহেতু সম্পত্তির মূল মালিকের একটি অংশ পাকিস্তানে চলে গেছে, তাই পুরো সম্পত্তি ‘এনেমি প্রোপার্টি’ হিসেবে গণ্য হবে। স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে আবারও এই বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়, যার ফলে সাইফের আবেদন খারিজ করে সরকারের পক্ষেই রায় দেয় আদালত।
এই সিদ্ধান্তে পতৌদি পরিবারের বহু সম্পত্তি— যার মূল্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা— সরকারি অধিগ্রহণে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা সাইফ আলি খানের জন্য এক বিরাট আর্থিক ও পারিবারিক ধাক্কা।