রবিবার, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫| রাত ১০:০৬

১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করলেন মুক্তিযোদ্ধা কানু

প্রতিবেদক
Staff Reporter
ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪ ৩:০৬ অপরাহ্ণ
১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করলেন মুক্তিযোদ্ধা কানু

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা পরিয়ে অপমান করার ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও স্থানীয়দের দাবি, এ ঘটনার পেছনে দীর্ঘদিনের জমে থাকা বিরোধ রয়েছে। এলাকার মানুষ মুক্তিযোদ্ধা কানুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ক্ষমতার অপব্যবহার, জনবিরোধী কাজ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে শত্রুতার অভিযোগ তুলেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাতিসার লুদিয়ারা গ্রামের স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কানুর সঙ্গে এলাকাবাসীর দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘদিনের। স্থানীয়দের অভিযোগ, কানু তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকার সম্মানিত ব্যক্তিদের অপমান এবং হয়রানি করতেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত ছিল।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তার উজ জামান জানান, মুক্তিযোদ্ধা কানুর বিরুদ্ধে হত্যা, তথ্য-প্রযুক্তি আইন, মারামারি ও রাজনৈতিক নানা অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন এলাকা থেকে দূরে ছিলেন এবং আত্মগোপনে ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। গত রোববার হঠাৎ করে এলাকায় আসার পর ক্ষুব্ধ জনতা তাকে ঘিরে ধরে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কানু দীর্ঘদিন এলাকায় অনুপস্থিত থাকার পরও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকার মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন। রোববার দুপুরে তাকে স্থানীয় বাজারে দেখতে পেয়ে উত্তেজিত জনতা তাকে কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যায়। সেখানেই তাকে ক্ষমা চাইতে এবং এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “কানু ভাই মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন, কিন্তু তার আচরণে আমরা বারবার অপমানিত হয়েছি। তিনি নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে এলাকার মানুষকে শোষণ করতেন। আমরা বাধ্য হয়ে এমন পদক্ষেপ নিয়েছি।”

ওসি আরও বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা কানুর সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। তিনি এলাকায় ফিরে আসার পর তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশিত হয়। তবে উত্তেজিত জনতার কাজ আইনবহির্ভূত ছিল, যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।”

অভিযুক্তরা দাবি করেন, মুক্তিযোদ্ধা কানুর নিজের কর্মকাণ্ডই এ ঘটনার জন্য দায়ী। তবে ঘটনাটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ায় বিষয়টি আরো বিতর্কিত হয়েছে।

এদিকে, মুক্তিযোদ্ধা কানু তার দাখিল করা মামলায় অভিযোগ করেছেন যে, তাকে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল এবং চাঁদা না দেওয়ায় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। তবে স্থানীয়রা এ দাবি অস্বীকার করেছেন।

এ ঘটনায় দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন, আবার অনেকে মুক্তিযোদ্ধা কানুর কর্মকাণ্ডের কারণে পরিস্থিতি এতদূর গড়িয়েছে বলে মনে করছেন।

সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনা শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার মানুষের দ্বন্দ্ব নয়, এটি স্থানীয় ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে গভীর সামাজিক সংকটের উদাহরণ। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দেশ জগত, ডেস্ক নিউজ

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ