শুক্রবার, ১১ই জুলাই, ২০২৫| রাত ১:২৫

হিমাচলে মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ধস: জলবায়ু বিপর্যয়ের ভয়াবহ বার্তা

প্রতিবেদক
staffreporter
জুলাই ১০, ২০২৫ ৫:১৯ অপরাহ্ণ
হিমাচলে মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ধস: জলবায়ু বিপর্যয়ের ভয়াবহ বার্তা

হিমাচলে মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ধস: জলবায়ু বিপর্যয়ের ভয়াবহ বার্তা

প্রতিবছর ভারতের হিমাচল প্রদেশে মেঘভাঙা বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যার ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। মাত্র এক মাসের বর্ষায় রাজ্যটিতে ১৯টি মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ২৩টি আকস্মিক বন্যা সংঘটিত হয়েছে, তাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৮ জন। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এ প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব এবং এটি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে হিমাচলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৪০৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল গবাদিপশু ও ঘরবাড়ির। ২০২৩ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪২৮ জন, যার মধ্যে অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল কুলু, মানালি ও সিমলা। রাজধানী সিমলায় বাড়ি ধসের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

২০২২ সালে মারা যান ১২৫ জন এবং হয়েছিল সাতটি মেঘভাঙা বৃষ্টি। এর আগের বছর, ২০২১ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৭৬ জন। বছর বছর এমন মৃত্যুর হার বাড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে।

আইআইটি রোপারের সমীক্ষা বলছে, হিমাচলের ৪৫ শতাংশ অঞ্চল ধসপ্রবণ। প্রায় ১৭ হাজার জায়গা রয়েছে যেগুলো ভাঙনের ঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৬৭৫টি স্থানে ঘনবসতি ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রয়েছে। ৫.৮ থেকে ১৬.৪ ডিগ্রি ঢালবিশিষ্ট এলাকাগুলো বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিবেশবিদদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন যে পরিমাণ বৃষ্টি এক মাসে হতো, তা কয়েকদিনেই নেমে আসে। ফলে দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা ও ধস। পাহাড়ি এলাকায় লাগামহীন নির্মাণকাজ, গাছ কাটা, রাস্তা ও সুড়ঙ্গ নির্মাণ পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

সচেতনতা ও পরিকল্পনার অভাবও পরিস্থিতিকে জটিল করছে। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তার মতে, দেশে পরিবেশকে কখনোই রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে দেখা হয় না। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণাতেও পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয় না। দিল্লির দূষণ সমস্যা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিবেশবিদ মল্লিকা জালান বলেন, “পরিবেশ নিয়ে রাজনীতিক ও জনগণের মধ্যে সহযোগিতা না থাকলে সমাধান সম্ভব নয়। আমাদের অভ্যাস বদলাতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু সরকার বা রাজনীতিকদের ওপর ছেড়ে দিলে কোনো উন্নয়ন হবে না।”

তথাগত সেনের মতে, পাহাড়ে যত্রতত্র বাড়ি তৈরি, নিয়ম না মানা ও পর্যটনের চাপে হিমাচলের শহরগুলোয় ভারসাম্য হারিয়েছে। একসময় নয়নাভিরাম সিমলা এখন দেখে ভয় লাগে। শহরের প্রতিটি ইঞ্চি দখল হয়ে গেছে।

পর্যটনের গুরুত্ব মানলেও, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি বলে মনে করেন মল্লিকা জালান। তিনি বলেন, “শুধু হিমাচল নয়, সিকিম, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ এমনকি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোও এই বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক—সব পর্যায়ে সচেতনতা, আইন ও পদক্ষেপ প্রয়োজন।”

পরিবেশ রক্ষায় দায়িত্ব সবার—এবার আর অবহেলা নয়, সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগই পারে এই বিপর্যয় রোধ করতে। তা না হলে প্রতিবছরের মতোই আগামী বছরগুলোতেও আমাদের শুনতে হবে—আরও বেশি মৃত্যু, আরও বেশি ধস, আরও বেশি ক্ষতি।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত