হাসিনার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বয়ান ‘ভুয়া’, বিশ্ব সম্প্রদায়কেও কাঠগড়ায় তুললেন ড. ইউনূস
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দাবি “ভুয়া” এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা সেই বয়ানের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “হাসিনা দাভোসে এসে বিশ্বের কাছে বলেছিলেন, তার শাসনে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির রেকর্ড গড়েছে। কিন্তু এটি একেবারেই মিথ্যা। কেউই তার সেই দাবি নিয়ে প্রশ্ন করেনি। এভাবে বিশ্বের নীরব থাকা একটি বড় শিক্ষা।”
তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতি ঘটতে দেওয়ার জন্য পুরো বিশ্ব দায়ী। আমি এমন এক অর্থনীতি চাই যেখানে সম্পদের অসমতা কমে এবং প্রবৃদ্ধি সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়।”
হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং ভিন্নমত দমনসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন ড. ইউনূস। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থপাচারের মতো অপরাধ বেড়েছে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নকে বিপদে ফেলছে।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে পৌঁছায়। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে প্রশংসা করলেও ড. ইউনূস সেই অগ্রগতিকে “মিথ্যা চিত্র” বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, “সত্যিকারের উন্নয়ন মানে হলো সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি।”
হাসিনা সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি, ড. ইউনূস শেখ হাসিনার ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত, যেখানে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি থাকবে।” হাসিনার শাসনকাল শেষে তিনি দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা টানাপড়েনের মুখে পড়েছে।
ড. ইউনূস ভারত সরকারের কাছে আহ্বান জানান, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে। তিনি বলেন, “এই টানাপড়েন আমাকে ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট দেয়। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য আমাদের শক্তিশালী এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।”
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূস, যিনি “গরিবের ব্যাংকার” হিসেবে পরিচিত, বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি প্রবৃদ্ধির সংখ্যা নয়, বরং মানুষের জীবনমান উন্নতির গল্প চাই।”