হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক পোস্টে দুদকের তীব্র প্রতিক্রিয়া, অভিযোগের তদন্তে প্রস্তুত সংস্থা
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টের প্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাতে এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, যাচাই-বাছাই ছাড়াই মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য করেছেন হাসনাত, যা দুদকের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
দুদক জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই একটি প্রতারকচক্র কমিশনের কর্মকর্তাদের পরিচয় ব্যবহার করে মামলা থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। সংস্থাটির ভাষ্য অনুযায়ী, এর সঙ্গে দুদকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত নন এবং ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একাধিক অভিযানে প্রতারকচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
তবে সামাজিক মাধ্যমে এসব প্রতারণার ঘটনা না জেনেই কেউ কেউ দোষারোপ করছে দুদককে—এমন মন্তব্য করে সংস্থাটি জানায়, তদন্তাধীন কোনো বিষয়ে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি কেউ অনৈতিক প্রস্তাব পান, তবে তার তথ্য সহ প্রমাণসহ দুদকের হটলাইন ১০৬-এ অথবা chairman@acc.org.bd মেইলে জানানোর অনুরোধ করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, দুদকের একজন মহাপরিচালক এবং আরেকজন উপপরিচালক পরিচয়ে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতুর কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মিতুকে বলা হয়েছে, “আপনি ডাক্তার মানুষ, আপনার টাকা-পয়সার তো অভাব থাকার কথা না।”
হাসনাতের দাবি, দুদকের ন্যূনতম ‘চা খাওয়ার বিল’ও নাকি এক লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরবর্তীতে হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পোস্টে তিনি তিনটি ভিডিও ক্লিপও সংযুক্ত করেন, যেগুলো অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
পোস্টে আরও বলা হয়, “আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, যেখানে এই ধরনের ঘুষ-দুর্নীতির অবসান ঘটবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, আমলাতন্ত্র আগের চেয়েও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।”
দুদক এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বলে দাবি করলেও, তারা জানিয়েছে—তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তবে কমিশন তা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
এই ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। আবার কেউ বলছেন, দুদকের উচিত সোচ্চার হয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং নিজেদের কর্মকর্তাদের আচরণের বিষয়ে আরও কঠোর নজরদারি চালানো।
এই ঘটনায় ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে, যা ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে জনগণের দীর্ঘদিনের উদ্বেগকেও সামনে নিয়ে এসেছে।